৩৬০০ টাকার বিনিময়ে ভূমি অফিস দেয় ১০ টাকার রশিদ!

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-15 22:46:15

খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি বর্তমানে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ অনেকের। ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের বিরুদ্ধে রয়েছে জমির খাজনা আদায়ের নামে ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থবাণিজ্য। এ ছাড়াও জমিসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান নিতে আসা লোকজনের সঙ্গে দাম্ভিকতার সঙ্গে কথা বলাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিন তদন্ত করে তার প্রতিকার চেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগও করা হয়েছে। উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের ছাতিয়ানগড় গ্রামের বাসিন্দা আবু বক্কর ছিদ্দিক আলী অভিযোগটি করেন।

কোনো প্রজা ওই ভূমি অফিসে জমির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করারও অভিযোগ রয়েছে তহশিলদার শাহ্ মো. মোখতার হোসেনের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের জমির খাজনা পরিশোধ ও জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার সমাধানসহ প্রজাদের বিভিন্ন সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপজেলার ইউনিয়ন ভূমি অফিসটি প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু ওই ভূমি অফিসের দায়িত্বরত কর্মকর্তা (তহশিলদার/নায়েব) শাহ্ মো. মোখতার হোসেনের ঘুষ, দুর্নীতির কারণে ভূমি অফিসের সেবা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তার কারণে ওই ইউনিয়নের প্রজারা বর্তমানে সেবার বিপরীতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ও হেনস্তার শিকার হচ্ছে চরমভাবে।

অভিযোগে আরও দাবি করা হয়েছে, কোনো প্রজা ওই ভূমি অফিসে জমির খাজনা পরিশোধ করতে গেলে তার কাছ থেকে ৪-৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হয়। আর ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ করা হয় মাত্র ১০-১২ টাকার। বাকি পুরো টাকাই পকেটে ভরেন তহশিলদার শাহ্ মো. মোখতার হোসেন। তার চাহিদামতো টাকা না দিলে কারোরই কোনো কাজ হয় না। কেউ তার চাহিদামতো টাকা না দিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে ওই তহশিলদার সেই প্রজাকে অশালীন আচরণ করেন। এমনকি ওই ভূমি অফিসে জমির খাজনা দিতে এসে কয়েক মাস ঘুরেও খাজনা দিতে পারেন না ভুক্তভোগীরা।

এদিকে আবু বক্কর ছিদ্দিক আলী তার অভিযোগে লিখেছেন, ‘আমি ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর মো. নজির উদ্দিন গং নামে ৮৮২ খতিয়ানের ৫৬৩৩ নং দাগের ৩৩ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ বাবদ ৩ নম্বর আঙ্গারপাড়া ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. মোখতার হোসেনের কাছে গেলে তিনি আমাকে ৩ হাজার ৬০০ টাকার হিসাব দেন। আমি তাকে সেই টাকা দেই। কিন্তু তিনি ৩৩ শতক জমির ভূমি উন্নয়ন কর মাত্র ১০ টাকার খাজনা রশিদ দেন। আমি তার কাছে ১০ টাকার খাজনা চেকের কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি আমাকে বলেন, তোমার জমি রেজিস্ট্রি করার প্রয়োজন নেই, তুমি চলে যাও। এখানে এ রকমের খাজনার চেক কাটা হয়। পরবর্তীতে ওই বছরের ২৬ ডিসেম্বর বর্ণিত দাগ ও খতিয়ানের ৫ শতক জমির খাজনা কাটতে গেলে আবার ৩ হাজার ৬০০ টাকা দাবি করেন।’

এই বিষয়ে আবু বক্কর ছিদ্দিক আলী বলেন, ‘আমি ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে আবেদন করেছি এবং সঠিক বিচার চাই।’

ঘটনার বিষয়ে তহশিলদার শাহ্ মো. মোখতার হোসেন বলেন, ‘৩ হাজার ৬০০ টাকা না, এটি ২ হাজার ৯৩২ টাকা। উনি যেটা বলেছেন সেটি ভুল। ওনাকে ২১ তারিখে ১টা চেক দেওয়া হয় সফটওয়্যারের ভুলের কারণে ১২টা দাগ ও ১৩টার পরিমাণ একসঙ্গে হয়ে যায়। উনি যখন রেজিট্রিতে যান তখন দাগের সঙ্গে পরিমাণ মেলে না। আমার কাছে যখন আসেন তখন আমি বিষয়টি দেখতে পাই। সেটি সফটওয়্যারের সমস্যা। তখন আমি ওনাকে বলি যেহেতু খাজনা নেওয়া আছে ২ হাজার ৯৩২ টাকা, সেহেতু ১০ টাকার একটি চেক দেই। ওই চেক দিয়ে উনি কাজ সারেন এবং পরবর্তীতে উনি ২ হাজার ৯৩২ টাকার চেকটি নিয়ে গেছেন।’ এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মারুফ হাসান বলেন, ‘অনলাইনে খাজনা দিতে আবু বক্কর ছিদ্দিক গিয়েছিলেন। ১৩টি দাগে এক হাজার ৯৪২ টাকা আসে। তবে অনলাইনে ভুল করে ১২টি দাগের স্থানে ১৩টি দাগের বিল আসে। সে কারণেই এ সমস্যা হয়েছে। আমরা যে কোনো তহশিলদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে সত্যতা নিশ্চিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’