নাব্যতা সংকটে নদী ভোগান্তিতে চরাঞ্চলের মানুষ

আমাদের প্রতিদিন
2024-04-19 00:01:29

গাইবান্ধা প্রতিনিধি:

গাইবান্ধার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী কুড়িগ্রাম, জামালপুর, বগুড়া ও গাইবান্ধা জেলা নদীতে নাব্যতা সংকটের কারণে প্রায় ৫০টি খেয়াঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নৌরুটে নৌকায় চলাচলকারী চরাঞ্চল এবং নদী তীরবর্তী এলাকার ২০ লক্ষাধিক মানুষ এখন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।

এ দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং জেলা পরিষদ সূত্রে জানা জায়, ব্রহ্মপুত্র এবং যমুনা তীরবর্তী কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সদর উপজেলা, বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা এবং জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ ও ইসলামপুরের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান পথই হচ্ছে নৌরুট। নদী পথে এসব এলাকার মানুষ নিয়মিত ব্যবসা বাণিজ্য, অফিস আদালতসহ বিভিন্ন কাজে যাতায়াত করে।

একসময় তিস্তামুখঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ এবং বালাসীঘাট থেকে বাহাদুরাবাদ ঘাটে রেলওয়ে ফেরি স্টিমার যাতায়াত করত। কিন্তু উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বালি ও পলি জমে জমে নদীগুলো ক্রমেই ভরাট হচ্ছে। ফলে নদীর গভীরতা ধীরে ধীরে কমে আসছে। বর্তমানে শুকনো মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার বুকে অসংখ্য চরভূমি জেগে ওঠায় নদীগুলো অসংখ্য শাখা প্রশাখায় পরিণত হয়েছে। জেগে উঠেছে এ অঞ্চলে এক হাজারেরও বেশি বালুচর। ফলে স্বাভাবিক সময় নৌরুটে যত সহজ যোগাযোগের পথ হয় শুকনো মৌসুমে নাব্যতা হারানোর ফলে ঘুরে যাতায়াত করতে হয় নৌকাগুলোকে। এর ফলে সময় যেমন বেশি লাগে তেমনি নৌ চলাচলে ব্যয়ও বেড়ে যায়। কিন্তু এক পর্যায়ে অক্টোবরের মাঝামাঝি নদীগুলোর শাখা প্রশাখাতেও নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়। ফলে নৌপথ সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এতে নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে খেয়াঘাটগুলো বন্ধ হয়ে ইজারাদাররাও আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে।

গাইবান্ধা জেলা পরিষদ এবং সংশ্লিষ্ট ইজারাদারদের সূত্র জানা যায়, বর্তমানে কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলায় ৫টি রৌমারীতে, ৪টি ও রাজিবপুরে ৩টি খেয়াঘাট, গাইবান্ধা সদরে ৮টি, ফুলছড়ির ১০টি ও সাঘাটার ৬টি অপরদিকে বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার দু’টি সারিয়াকান্দির ৩টি এবং জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার ৩টি ও দেওয়ানগঞ্জের ৫টি নৌ ও খেয়াঘাট একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে এসব উপজেলা জেলার অভ্যন্তরীণ রুটে সীমিতভাবে কিছু নৌকা চলাচল করলেও মাঝপথে গিয়ে ডুবোচরে আটকে যায়। তখন যাত্রীদের দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। এ দিকে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের মানুষদের এখন পায়ে হেঁটে হাট-বাজারে এবং দূর দূরান্তরে যাতায়াত করতে হচ্ছে। ফলে মহিলা, শিশু ও রোগীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিকল্প অন্য কোনো পথে চলাচল করার উপায় থাকে না।

বালাসীঘাটের ইজারাদার শেখ সরদার আসাদুজ্জামান হাসু জানান, নাব্যতা সংকটের কারণে মূল ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার পূর্ব পাশে নদীর ভেতরে বর্তমানে ফেরিঘাট চালু করতে হয়েছে। নাব্যতা সংকটের কারণে বছরের প্রায় ৬ মাসই নৌকা চলাচল বন্ধ করে দিতে হয়। ঘাট লিজ নিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হয়।