টানা বর্ষণে বীরগঞ্জে আগাম শীতকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি

আমাদের প্রতিদিন
2024-07-26 05:34:15

আব্দুর রাজ্জাক,  বীরগঞ্জ (দিনাজপুর):

অনাবৃষ্টি আর প্রচন্ড তাপদাহের ফলে মাটি ফেটে চৌঁচির হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি কাঙ্খিত বৃষ্টির । আবহাওয়া এই বৈরীতায় আমন চাষ নিয়ে সংকটে পড়েছে কৃষকেরা। তবে গতকাল ২১ সে: বুধবার সন্ধ্যা হতে শুরু হওয়া টানা বর্ষনে আমন চাষীদের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিলেও আগাম সবজি চাষীদের কপালে চিন্তার ভাজ পড়েছে ।

কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জের শীতকালীন সবজি চাষীরা। আর্থিকভাবে মুনাফা লাভ ও স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় এই এলাকার অধিকাংশই কৃষক বাড়ীর আশে পাশে পতিতসহ  কৃষি জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ করে থাকেন। এরই ধারবাহিকতায় এবার ফুলকপি, পাতাকপি, সীম, মুলা, কাঁচামরিচ, টমেটো, বরবটি, বেগুন, পালংশাক, লালশাক, লাউ সবজি চাষ করেছে। সবজি ক্ষেতগুলি সবুজ শ্যামল ছায়ায় ঢেকে গেছে। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বর্ষনে তলিয়ে গেছে বেশির ভাগ সবজির ক্ষেত।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোট আবাদি জমির পরিমান ৩২হাজার ৮৯৬হেক্টর। এর মধ্যে ৯শত হেক্টর জমিতে আগাম সবজি চাষ করা হয়েছে। এবার খরিপ-২ মৌসুমে সবজি চাষের লক্ষ্য মাত্রা রয়েছে ৯৫২হেক্টর জমিতে এবং রবি মৌসুমে ২হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

কিন্তু কয়েক দিনের তাপদাহের পর গত বুধবার সন্ধ্যা হতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উপজেলায় ৪৮মিলি লিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা হতে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ৮৩মিলি লিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ রেজাউল করিম।

এই অতি বৃষ্টির ফলে উপজেলার সবজিগ্রাম খ্যাত সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগরসহ মোহনপুর, শিবরামপুর, সুজালপুর, শতগ্রাম ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মাঠে থাকা আগাম সবজির ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সবজি চাষিরা। সেই সাথে নেতিয়ে পড়েছে  সবজি গাছের চারা এবং উঠতি ফসলের অনেক পানিতে পঁচতে শুরু করেছে এই বৃষ্টিতে।

এ ব্যাপারে উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের প্রাণ নগর গ্রামের সবজি চাষি আহমেদ জুয়েল জানান, আমি একটি বেসরকারি এনজিও হতে ঋণ নিয়ে  ৫একর জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করেছি। প্রতিটি গাছ বেড়ে উঠেছিল সতেজ হয়ে কিন্তু বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারণে ফুলকপির গাছগুলো  দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এবং নেতিয়ে পড়েছে মাটির সাথে।

একই কথা জানিয়ে সবজি চাষি মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, আমি ২একর জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি হিসেবে পাতাকপি ও ফুলকপি  চারা রোপন করেছি। আগাম সবজি চাষ করে কয়েক বছর ভালো টাকা আয় হয়েছে। তবে এবার বৈরী আবহাওয়ার। অনাবৃষ্টি আর আর প্রচন্ড তাপদাহের পর টানা বর্ষন শুরু হয়েছে। এতে সবজি চারা ক্ষতি হয়েছে। এই টানা বর্ষণে সবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমি চারার গোড়ায় পচন ধরেছে। ফলে গাছ মনে যাওয়ায় আমাকে আর্থিক ভাবে লোকসান গুনতে হবে।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবুল কাসেম জানান, উপজেলা বেশির ভাগ শীতের সবজি আবাদ হয় প্রাণনগর গ্রামে। এবার এখানে ৭০হেক্টর জমিতে আগাম জাতের সবজি চাষ হয়েছে। আগাম সবজি চাষ একটু কঠিন কাজ। চারা রোপনের পর থেকে ফলন তোলা পর্যন্ত জমির ক্ষেত পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হয়। তা না হলে ক্ষতি মুখে পড়তে পারে কৃষক। বর্তমানে টানা বৃষ্টির ফলে আগাম সবজি চাষে আশংকার সৃষ্টি হয়েছে। অতি বৃষ্টির ফলে শিকড়ে পচন ধরে চারা মরে যেতে পারে। এতে ক্ষতির মুখে পড়তে পারে আমাদের কৃষক।