৬ বৈশাখ, ১৪৩১ - ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ - 19 April, 2024
amader protidin

রাজধানীতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আতঙ্ক

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
423


বিএনপির গণসমাবেশ

ঢাকা অফিস:

১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে রাজনৈতিক অঙ্গনে ততই বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে সাধারণ মানুষের মাঝেও রয়েছে অস্বস্তি। কী হতে চলেছে ১০ ডিসেম্বর। এ নিয়ে সবার মনে প্রশ্ন। হঠাৎ করে ১ ডিসেম্বর থেকে দেশজুড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ অভিযানের ফলে এরই মধ্যে অনেকের ভেতর আতঙ্কও ছড়িয়ে পড়েছে। এই আতঙ্ক শুধু বিএনপি বা আন্দোলনকারী দলের নেতাকর্মীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ তা নয়, রাজধানীতে সাধারণ মানুষও পড়ছেন জেরার মুখে। ঢাকায় চাকরির পরীক্ষা দিতে এসেছেন হাসিবুর রহমান। কোনো দল করেন না তিনি। একটি আবাসিক হোটেলে উঠেছেন। গত শনিবার রাতে তিনি কয়েক দফা তল্লাশি ও জেরার মুখে পড়েন।

হাসিব বলেন, ‘কবে বিরোধী দলের সমাবেশ, তার জন্য তো আমাদের লিখিত পরীক্ষা আটকে থাকবে না। আমার মতো অনেকেই ঢাকায় এসে হোটেল বা অন্য কোথাও উঠেছেন। কিন্তু কেন সন্দেহ করা হচ্ছে আমাদের বুঝে আসছে না।’ তার পরামর্শ, ‘যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় যত ধরনের পরীক্ষা আছে সব স্থগিত করা দরকার।’

হাসিবের মতো বিদেশগামীর কেউ কেউ ঢাকায় এসে পড়েছেন বিপাকে। বনানীর একটি হোটেলে একজন বিদেশগামীকে তল্লাশি করা হয়। তার মোবাইলে কিছু আছে কি না তাও দেখা হয়। পরে তার পাসপোর্ট ফেরত দেওয়া হয়।

সাধারণ মানুষ বলছেন, কোন দল ক্ষমতার লড়াই করছে সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু যাদের কর্ম করে খেতে হয় তারা তাদের পেটের দায়ে সংসারের দায়ে ঢাকায় আসেন। তারা কর্মস্থলে যেতে চান।

ডিবির প্রধান হারুন অর রশীদ গত রবিবার বলেছেন, ‘১০ ডিসেম্বরের আগে কেউ ঢাকায় ঢোকা বা সমাবেশের আগে রাস্তায় কারো বসে থাকার সুযোগ নেই।’

অন্য বিভাগীয় সমাবেশের দুই দিন আগে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাস্তার বাধা পেরিয়ে সমাবেশস্থলে এসে অবস্থান নেন। কিন্তু রাজধানীতে সমাবেশের আগে কাউকে এভাবে বসতে দেওয়া হবে না- এমনটিই ইঙ্গিত দেন ডিবি প্রধান। সমাবেশের আগে ঢাকায় বিএনপির কোনো নেতাকর্মী প্রবেশ করছে কি না বা কোথাও উঠছে কি না তা নজরে রাখছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে ঢাকায় সমাবেশের জন্য অনুমতি চাইলে পুলিশ কয়েক ঘণ্টা আগে অনুমতি দিত বিএনপিকে। তবে এবার ১১ দিন আগেই ২৬ শর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ডিএমপি সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু নয়াপল্টনে সমাবেশ করার বিষয়ে এখনো অনড় বিএনপি। যদি শেষ পর্যন্ত দলটি নয়াপল্টনেই সমাবেশে অনড় থাকে তাহলে নানামুখী বাধার মুখে পড়তে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বারবার সতর্কও করা হচ্ছে। তাদের ধারণা, সমাবেশের নামে বিএনপি বিশৃঙ্খলা করতে পারে।

এদিকে একদিনে রাজধানীতে ২৫৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ নিয়ে গত পাঁচদিনে রাজধানীতেই ৭২৭ জন গ্রেপ্তার হলেন। অন্যদিকে অভিযানে সারাদেশে গ্রেপ্তার হয়েছে এক হাজার ৩১৯ জন। গ্রেপ্তারকৃতদের বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, এ সময়ের মধ্যে দুই হাজার ২২৪টি অভিযান পরিচালনা করে যাদের আটক বা গ্রেপ্তার করা হয় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৪০৫টি। পুলিশের দাবি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের ওপর লিফলেট বিতরণের সময় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। এমনকি তার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট জারি করা হয়েছে।’

এদিকে সমাবেশের স্থান এখনো চূড়ান্ত হয়নি। সমাবেশের বাকি আছে আর চারদিন। স্থান নির্ধারণের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সোমবার সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের (বিএনপি) পক্ষ থেকে একজন এবং ডিএমপির পক্ষ থেকে একজনকে গণসমাবেশের স্থানের বিষয়ে সমন্বয় করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করছি তারা এ বিষয়ে ভালো একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে, ভালো ফলাফল বেরিয়ে আসবে গণসমাবেশের স্থানের বিষয়ে। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।’

এদিকে বিএনপির তরফ থেকে সমাবেশস্থল নয়াপল্টনের পরিবর্তে কাছাকাছি কোথাও দেওয়ার অনুমতি চেয়ে দৌড়ঝাঁপ করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। জনস্বার্থে তারা কিছুটা নমনীয় ভাব দেখালেও সরকার হার্ড লাইনে থাকলে তারাও তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন।

এরই মধ্যে গতকাল ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেছেন, বিএনপিকে রাস্তায় সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগের নেতারাও কঠোর বার্তা দিয়ে যাচ্ছেন।

বিএনপি মহাসচিবকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর বিএনপি নাকি রাজপথ ও ঢাকা দখল করবে। আমাদের নেতাকর্মীরা মহানগর, জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লায় পাহারায় থাকবে। বিএনপি বি আরটিসির বাস পুড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট সড়কে শেখ হাসিনার ভিত্তিপ্রস্তর রাতের অন্ধকারে পুড়িয়েছে। তারা আগুন, লাঠি নিয়ে আসবে এজন্য তারা পার্টি অফিসে সমাবেশ করতে চায়। বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ফখরুল বলেন খাঁচা।’

‘দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে’ এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের মানুষ তাকিয়ে আছে ১০ ডিসেম্বরের দিকে। যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল করতে হবে। মামলা-হামলা ও গ্রেপ্তার উপেক্ষা করে আমাদেরকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

সমাবেশের স্থান হিসেবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে বিকল্প প্রস্তাব এলে সেটা বিবেচনায় নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘বিকল্প স্থান যদি আমাদের কাছে সন্তোষজনক মনে হয়, যদি নিরাপদ মনে হয় সেক্ষেত্রে বিবেচনা করা হবে। এই মুহূর্তে বিকল্প নাম বলা যাচ্ছে না। নয়াপল্টনে আমাদের সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত আছে।’

সমাবেশকে কেন্দ্র করে সরকার হামলা-মামলা ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করছে অভিযোগ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীরা ভীত নয়। যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাÐ মোকাবিলা করেই বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবে।’

সোমবার সকাল থেকে মির্জা আব্বাসের বাসার সামনের সড়কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিলে দুপুর পৌনে ১২টায় নিজ বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘বাসায় নিরাপদ বোধ করছি না। অতীতের মতো আক্রমণের শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছি। সরকার যতই বাধা দিক না কেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবেই ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে। কোনো উসকানিতে পা দেবে না।’

বিএনপি বেশি বাড়াবাড়ি করলে শাপলা চত্বর আন্দোলনের মাধ্যমে আলোচনায় আসা ধর্মীয় সংগঠন হেফাজতে ইসলামের মতো পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তার বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় উঠে। দায়িত্বশীল একজন নেতার এমন বক্তব্য নিয়ে দলের ভেতরেও আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।

বিএনপিকে কোনোভাবেই রাস্তায় সমাবেশ করতে অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক। গতকাল তিনি বলেন, ‘বিএনপি রাস্তাঘাটে সমাবেশ করার অনুমতি পাবে না।’

র‌্যাব সদর দপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, গণসমাবেশ ঘিরে যেকোনো ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, স্পেশাল ফোর্স, স্পেশাল ডগ স্কোয়াড, হেলিকপ্টার ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। নাশকতার পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সেজন্য সাদা পোশাকে মোতায়েন থাকবে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়