১০ বৈশাখ, ১৪৩১ - ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ - 23 April, 2024
amader protidin

দশ বছরেও উন্নয়ন বঞ্চিত বর্ধিত ওয়ার্ডবাসী

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
204


রংপুর সিটি কর্পোরেশন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

২০১২ সালে ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে যাত্রা শুরু করে রংপুর সিটি কর্পোরেশন। এরপর উন্নয়নের আশায় বুক বেঁধেছিল এ এলাকার মানুষ। তবে দীর্ঘ ১০ বছরেরও বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দারা সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

সিটি কর্পোরেশনের নাগরিক সুবিধা নিয়ে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন নগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ বখশি এলাকার কৃষক আজমল হোসেন। তিনি বলেন, ‘সউগ জায়গায় পাকা আস্তাও (রাস্তা) নাই। বৃষ্টির দিনোত কাদার মাঝোত জমির ধান তোলা নাগে। অনেক সমায় ভ্যান কাদাত আটকি যায়। একটা বিরিজ নাই। হামরাই টাকা তুলি কাঠের বিরিজ বানায়া ওর উপর দিয়া চলি। কাউন্সিলর, মেয়রের কত কওয়া হইছে। কাউয়ো (কেউ) তো দশ বছরোত শুনিল না। এলাকাত কারেন্টের লাইন গেইছে। কিন্তু বাড়ির কাছোত চিকিৎসা করার জায়গা নাই। বাড়ির ময়লা নিবার সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি আসে নাই। থাম্বাগুলাত লাইট দেওয়া নাই। আইতোত আন্ধারে (রাতের আঁধারে) বাড়ি থ্যাকি বেরবার পারো না। আস্তা (রাস্তা) ছাড়া এলাকাত সিটির কোনো উন্নয়ন নাই।’ 

তিনি জানান, আগে ইউনিয়নের অধীনে থাকার সময় চালসহ সরকারের নানান সহযোগিতা পেয়েছিলেন। সিটি কর্পোরেশন হওয়ার পর তিরি আর কিছুই পাননি। ধানের দাম কম, আলুর দাম নাই। তারওপর সাহায্য নেই বলে আক্ষেপ করেন তিনি।

একই এলাকার আনিস মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকা থেকে মেডিকেল প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে। ওয়ার্ডের কাছে একটি হাসপাতাল প্রয়োজন ছিল। ৭ কিলোমিটার দূরে সাতমাথায় একটি হাসপাতাল আছে, কিন্তু সেখানে সবধরনের চিকিৎসা পাওয়া যায় না।’

সাবেক রাজেন্দ্রপুর ইউনিয়ন ও বর্তমান সিটি কর্পোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা এনজিও কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডে জগদীশপুর, কামদেবপুর, বিন্ন্যাটারীসহ আশপাশের গ্রামে কোন উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, সড়কবাতির খুঁটি লাগানো হয়েছে, কিন্তু লাইট নেই। রাতের বেলা অন্ধকারে যাতায়াত করা খুব কষ্টের। নামেই সিটির বাসিন্দা আমরা, অথচ নগরীর কোনো সুযোগ-সুবিধাই নেই এখানে।’ 

১০ বছরে নগরের যাপিত জীবনে নানা বঞ্চনার আক্ষেপ রয়ে গেছে নগরী বর্ধিত ১৮টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের। সিটি কর্পোরেশনের সব ওয়ার্ডগুলোতে নিশ্চিত হয়নি উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা, মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার। সরকার প্রতিটি এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করেছে। তবে বিদ্যুতের মতো ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছায়নি ওয়ার্ডগুলোতে।

রংপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার পর সাবেক পৌরসভার ১৫টি ওয়ার্ডের সাথে রংপুর সদরের রাজেন্দ্রপুর, সাতগাড়া, হরিদেবপুর, উত্তম, দর্শনা, তামপাট, তপোধন, সদ্যপুষ্করনী, পরশুরাম ও চন্দনপাট ইউনিয়নের আক্কেলপুর, দর্শনা পাহাড়ী, কৃষামত বিশু, শেখপাড়া, বড় রংপুর, নাজিরদিগড়, পানবাড়ী আরাজি তামপাট, আরাজি ধর্মদাস, তালুক ধর্মদাস, তালুক তামপাট, নগর মীরগঞ্জ, খোর্দ্দ তামপাট, বীরভদ্র, আরাজিবন খামাড়, তালুক বকচি, রাজুখা, আজিজ, হোসেনগর, তালুকরঘু, মেকুরা, গোদা শিমলা, তপধন, খলিশাকুড়ি, চাঁদকুটি, আরাজি গুলাল বুধাই, মোহাব্বতখা, বধুকমলা, বাহারকাছনা, চিলমন, রামগোবিন্দ, বিনোদ, হারাটি, আরাজি পরশুরাম, দেবত্তর তালুক, কোবারু, বাহাদুর সিংহ, চব্বিশ হাজারী, বারঘরিয়া, হরিরাম পিরোজ, অভিরাম, গোয়ালু, পশ্চিম গিলাবাড়ী, জগদীশপুর, বক্তারপুর, কামদেবপুর, বিন্নাটারী, চক ইসবপুর, পক্ষিফান্দা, ভবানীপুর, রাধাকৃষ্ণ, গোপীনাথপুরসহ অন্যান্য গ্রাম যুক্ত করে নতুন আরও ১৮টি ওয়ার্ড গঠন করে সিটিতে যুক্ত করা হয়।

রংপুর মহানগর সুজনের সভাপতি অধ্যক্ষ খন্দকার ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার ১০ বছরে যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল সেটি হয়নি। বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে আধুনিক পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে উঠেনি, সুপেয় পানির সরবরাহ করা হয়নি, যাতায়াত ব্যবস্থা ভঙ্গুর রয়েছে। সেই সাথে বর্ধিত ওয়ার্ডগুলোতে পরিকল্পিত নগরায়নে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়নি। আগামী ২৭ ডিসেম্বর নির্বাচনে নির্বাচিত নগরপিতাকে একজন দক্ষ পরিকল্পনাবিদের মাধ্যমে বর্ধিত এলাকায় পরিকল্পিত উন্নয়নে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলে সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত এলাকাবাসী নগরীর সুযোগ সুবিধা পাবে।’

২০৫ দশমিক ৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে রংপুর সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হয় ২০১২ সালের ২৮ জুন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর এ সিটি কর্পোরেশনের তৃতীয় পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ৯ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দের পর শুরু হবে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়