৩ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ - ১৭ মে, ২০২৪ - 17 May, 2024
amader protidin

তারাগঞ্জে সালিশ বৈঠক মাথা ন্যাড়া করে জুতার মালা

আমাদের প্রতিদিন
2 weeks ago
100


তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি:

রংপুরের তারাগঞ্জে কথিত পরকীয়া সম্পর্কের অভিযোগে এক গ্রাম্য সালিশে তিন সন্তানের জনককে মাথা ন্যাড়া করিয়ে গলায় জুতার মালা পড়ানো ও এক গৃহবধূকে কান ধরে উঠাবসার পর মাটিতে থু-থু ফেলিয়ে চাটতে বাধ্য করা হয়েছে সমাজপতিরা। গত শনিবার (২৭ এপ্রিল) রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টায় উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের পাচঁআনি গ্রামে এই বর্বরোচিত ঘটনাটি ঘটে।

এলাকাবাসি ও ভুক্তভোগী পরিবার জানায়, উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের পাঁচআনি গ্রামের  তিন সন্তানের জনক আবেদুল ইসলাম (৩৬) এবং তার স্ত্রী সাবিনা বেগমের সাথে একই গ্রামের দুই সন্তানের জনক বাবুল মিয়া ও তার স্ত্রী চেনো আরা বেগম (২৮) এর সঙ্গে দীর্ঘদিন থেকে সুসম্পর্ক চলে চলছিলো। সেই সুবাদে একে অপরের বাড়িতে মাঝে মধ্যেই যাতায়ত করেন। দুই পরিবারের সুসম্পর্কের ঘটনাটি এলাকার কিছু লোকজন মেনে নিতে না পেরে তিন সন্তানের জনক আবেদুল ইসলাম ও গৃহবধূ চেনো আরাকে নিয়ে কুরুচিপূর্ন কথা রটিয়ে বেড়াতো। বাবুলের স্ত্রী চেনোবালা তার মেয়ে অসুস্থতার কথা শুনে ঢাকায় মেয়ে জামাইয়ের বাড়িতে গিয়ে প্রায় এক মাস পর বাড়িতে ফিরে আসেন। ওই সময়ের মধ্যে আবেদুল ইসলাম মা—বাবা ও স্ত্রী সন্তানের ভরন পোষনের জন্য কাজের খোেঁজ চট্টগ্রামে গিয়ে কাজ করতে থাকেন। গৃহবধূ বাড়িতে ফিরে আসায় গ্রামের সমাজপতিরা গৃহবধূ চোনোবালা আবেদুল ইসলামের সঙ্গে ঢাকায় পালিয়ে এক সঙ্গে ছিলেন বলে মিথ্যা অপবাদ দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে গত ২৫শে এপ্রিল আবেদুলের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বাড়িতে ফিরে আসতে বলেন সমাজপতিরা। গত ২৭ শে এপ্রিল আবেদুল বাড়িতে আসলে ওইদিন রাত প্রায় ১২ টায় পাচঁআনি গ্রামের ছকিমুদ্দিনের বাড়িতে সালিশ ডাকেন। সালিশ বৈঠকে সমাজপতি আব্দুল আজিজ বগড়াকে সভাপতি বানিয়ে ওই এলাকার আব্দুল করিম মুন্সী, খাদেমুল ইসলাম, আব্দুল কাদের ,লিটন মিয়া,আবেদ আলী টন্না মাহমুদ ও মোঃ সাইদিসহ ৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। বৈঠক চলাকালিন সময়ে গোপনে সমাজপতিরা আবেদুলের পরিবারের নিকট থানা পুলিশ না করে সালিশ বৈঠকে ঘটনার সমাপ্তি টানবেন বলে ১লাখ টাকার হাতিয়ে নেয়। পরে সালিশ বৈঠক বসলে শালিশী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই দিন রাত প্রায় ৪ টায় সমাজপতিরা আবেদুল ইসলামকে মারধর করার পর মাথা ন্যাড়া করিয়ে দেয়ার পর তার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন। এবং মাটিতে থু—থু ফেলিয়ে সেই থু—থু চাটানো হয়। এদিকে একইভাবে গৃহবধূ চেনোআরা বেগমকে কান ধরে উঠা—বসানোর পর মাটিতে থু—থু ফেলিয়ে সেই থু—থু চাটানো হয়। এতে গ্রামের বেশ কয়েকন প্রতিবাদ করলেও সমাজপতিরা যে রায় দিয়েছেন সেটাই ইসলামী শরীয়ত মতে সালিশ করা হয়েছে জানানো হয়। অভিযুক্ত আবেদুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ভাই মুই গরীব মানুষ মিথ্যা দুনার্ম ভালো লাগে না। মোর মাথা ক্যালে দিছে, ছ্যাপ চাটাইছে তাতে মোর সম্মর্ন যায় নাই। ওমরা মুরব্বী মানুষ যা করছে মোর ভালোর জন্য করছে। সমাজপতি আবেদ আলীর সঙ্গে কথা হলে তিনি ঘটনা স্বীকার করে বলেন, সালিশ বৈঠকটি ইসলামী শরিয়ত মতই করা হয়েছে। আর সেই মতাবেক অভিযুক্ত পুরুষ ও নারী যা শাস্তির বিধান রয়েছে তাই করা হয়েছে। ইউপি সদস্য মজুমদার রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমাকে ওই শালিশ বৈঠকে ডাকানো হয়নি। এলাকার একটি কুচক্রীমহল সালিশ বৈঠকের নামে শুনেছি লাখ টাকা নিয়েছে। আবার ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। হাড়িয়ারকুঠি ইউপি চেয়ারম্যান কুমারেশ রায়ের সঙ্গে  মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও না পাওয়ায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তারাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিদ্দিকুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে থানায় কেউ জানায়নি বা অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  

 

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়