১৫ চৈত্র, ১৪৩০ - ২৯ মার্চ, ২০২৪ - 29 March, 2024
amader protidin

শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ কমেছে তিনগুণ

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
650


 

ঢাকা অফিস:

ঢাকা: বিদায়ী বছরজুড়ে উত্থান পতনের মধ্যে পার হয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা গেল বছর কেনার চেয়ে প্রায় তিনগুণ শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছেড়েছেন। ২০২২ সালে বিদেশিরা এক হাজার ১৫৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার শেয়ার কেনেন। বিপরীতে তিন হাজার ২৫ কোটি ১৮ লাখ টাকার শেয়ার বিক্রি করেন। অর্থাৎ প্রায় তিনগুণ বেশি শেয়ার বিক্রি করেন।

এদিকে গত ৩১ ডিসেম্বর দেশের প্রধান পুঁজিবাজার  ডিএসইতে মোট লেনদেনের মাত্র ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এসেছে বিদেশিদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে। এছাড়া পুঁজিবাজার আরও খারাপ হতে পারে এই ভয়ে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করেই ক্ষান্ত হননি, অন্তত ২৩ হাজার বিও অ্যাকাউন্টধারী (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) পুঁজিবাজার ছেড়েছেন।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো কোম্পানির অভাব, শেয়ারের দাম অতি মূল্যায়নের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে  বৈশ্বিক অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। এছাড়া বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো হচ্ছে— এমন খবরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে দেশে সুদের হার বৃদ্ধি, মার্কিন (ইউএস) ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন এবং পুঁজিবাজারে ঘন ঘন নীতি পরিবর্তনের কারণে বিদেশিরা শেয়ার বিক্রি করে পুঁজিবাজার ছেড়েছেন।

এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট-এর প্রতিবেদন বলছে, জুলাই ২০২১ থেকে জুন ২০২২ সময়ের মধ্যে পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ তুলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা। এরপর রয়েছেন যথাক্রমে লুক্সেমবার্গ, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর, কানাডা, মরিশাস, পাকিস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিনিয়োগকারীরা।

পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ আবু আহমেদ বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে এখন পর্যন্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনা যায়নি। সুশাসনের অভাব তো রয়েছে। এসব কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা কমে যাওয়ায় তারা শেয়ার বিক্রি করে চলে গেছে। 

শেয়ার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, গত ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সময়ে এক লাখ ৭৩ হাজার ৯৮টি বিও অ্যাকাউন্ট কমেছে। এর মধ্যে বিদেশিদের ২৩ হাজার ২৪৪টি। 

২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিও ছিল ৮৬ হাজার ৩৬১টি। সেখান থেকে ২৩ হাজার ২৪৪টি কমে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর দাঁড়ায় ৬৩ হাজার ১১৭টি।

২০২২ সালে ডিএসইতে দেশি-বিদেশি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের লেনদেন হয়েছে দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩০০ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার টাকার শেয়ার। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনা-বেচাবাবদ লেনদেন হয়েছে মাত্র চার হাজার ১৭৯ কোটি ৯২ লাখ ২৭ হাজার ৬৯৩ টাকার, অর্থাৎ পৌনে ২ শতাংশ। এর মধ্যে ২০২২ সালে এক হাজার ১৫৪ কোটি ৭৪ লাখ ২৬ হাজার ২৫০ টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিদেশিরা বিক্রি করেছেন তিন হাজার ২৫ কোটি ১৮ লাখ এক হাজার ৪৪৩ টাকার শেয়ার। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে গত বছরে বিদেশিরা এক হাজার ৮৭০ কোটি ৪৩ লাখ ৭৫ হাজার ১৯৩ টাকা তুলে নিয়েছেন অর্থাৎ নিট বিনিয়োগ কমেছে।

২০২১ সালে ডিএসইতে মোট তিন লাখ ৫৩ হাজার ৯৭৮ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছিল। সেখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল সাত হাজার ৭৬৪ কোটি ২১ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৫ টাকার শেয়ার। ওই বছর দুই হাজার ৫৫৮ কোটি এক লাখ ১১ হাজার ৮২৩ টাকার শেয়ারের বিপরীতে পাঁচ হাজার ২০৬ কোটি ২০ লাখ ৫৮ হাজার ৯২১ টাকার শেয়ার বিক্রি করেছিল। অর্থাৎ শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রি বেশি করেছিলেন বিদেশিরা।

গত ৩০ জুন বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশিরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন মাত্র ২১ কোটি ১২ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। এর বিপরীতে ৪০ কোটি ৭৭ লাখ ডলারের সমপরিমাণ টাকার শেয়ার বিক্রি করে বিনিয়োগ তুলে নেন। ফলে নিট বিনিয়োগ কমে ১৯ কোটি ৬৪ লাখ ডলার।

এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরে বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ কমে আরও বেশি। ওই বছর প্রায় ৪১ কোটি ডলারের সমপরিমাণ টাকা তুলে নেন বিদেশিরা। বিদেশিরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেন ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ ডলার, বিপরীতে বিক্রি করেন ৭৫ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের সমপরিমাণ শেয়ার।

এছাড়া করোনার সময় অর্থাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিদেশিরা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করেছিল ৩৩ কোটি ৩৩ লাখ ডলার, আর বিক্রি করেছিল ৪৭ কোটি ৮৪ লাখ ডলার। ওই বছর বিদেশিদের নিট বিনিয়োগ কমেছিল ১৪ কোটি ৫১ লাখ ডলার।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়