১৫ চৈত্র, ১৪৩০ - ২৯ মার্চ, ২০২৪ - 29 March, 2024
amader protidin

দিনাজপুরে বলসুন্দরী চাষে পারভেজ মিয়ার সফলতা

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
548


দিনাজপুর প্রতিনিধি:

দিনাজপুরের হিলি ও নবাবগঞ্জসহ আশপাশের উপজেলাগুলোতে শীত মৌসুমে বাজারে আগাম বলসুন্দরী জাতের বরই উঠেছে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বাজারে বরই বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন অনেক চাষি। সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান। ফলে এ অঞ্চলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে বরই চাষ।

জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে প্রথমবারের মতো চার বিঘা জমিতে বলসুন্দরী জাতের বরই চাষ করেছেন পারভেজ মিয়া নামে এক কৃষক। উপজেলার আফতাবগঞ্জ এলাকায় পথ চলতে দেখা মেলে খÐ খÐ জমিতে এই বরইবাগান। দূর থেকে দেখে যে কারো মনে হতে পারে এটি বরই নয়, আপেলের বাগান। গোলাকৃতির বরইয়ের ভারে মাটি ছুঁইছুঁই গাছের ডাল। ভার সহ্য করতে প্রতিটি ডালের নিচে দেয়া হয়েছে বাঁশের খুঁটি। বরইয়ের ঝাড়ে গাছের পাতা খুঁজে পাওয়াই যেন দুষ্কর।

সরেজমিন দেখা যায়, বাগানজুড়ে চলছে নারী শ্রমিকদের বরই সংগ্রহের কাজ। সংগ্রহ করা পরিপক্ব বরই নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপ করে রেখে পরে এর শরীর থেকে ধুলাবালি মোছা হয়। পরে কাগজের বাক্স ও ক্যারেটে ভরে পাঠানো হচ্ছে দিনাজপুরসহ আশপাশের জেলায়। স্থানীয় পাইকাররা বাগানে এসেই এসব আগাম বরই সংগ্রহ করছেন। এতে লাভবান হচ্ছেন বরইচাষি পারভেজ মিয়া। পারভেজ মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় বরই চাষে সফলতা দেখে আমিও একটি বাগান করেছি। আমার বাগানে বলসুন্দরী জাতের গাছ রয়েছে। প্রথম বছরেই আশানুরূপ ফল এসেছে গাছে। এ ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ের কিছু আগেই আমার বাগানের বরই পরিপক্ব হয়েছে। ফলে আগাম বরই বিক্রিতে ভালো মুনাফা পাচ্ছি।’

স্থানীয় বাজার ঘুরে এবং পাইকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় পাইকারি বাজারে বলসুন্দরী জাতের বরই বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা কেজি। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ৭০-১০০ টাকা। এ ছাড়াও কাশ্মীরি কুল ও বাউকুলসহ হাইব্রিড জাতের বরই বিক্রি হচ্ছে ৬০-১২০ টাকা কেজিতে। বরেন্দ্র অঞ্চল হওয়ায় এ উপজেলার মাটিতে উৎপাদিত বরই বেশ মিষ্টি বলে জানান খুচরা বিক্রেতারা।

উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্য বলছে, নবাবগঞ্জ উপজেলায় বরইয়ের পাশাপাশি ড্রাগন, মালটাসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে বলসুন্দরী, কাশ্মীরি কুলসহ বিভিন্ন বিদেশি জাতের বরইয়ের চাষ হয়েছে।

বাগানের পাশেই রয়েছে এ অঞ্চলের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরী। সেখানে আসা দর্শনার্থীরা একবার এসে এ বাগান দেখতে ভিড় করছেন। কিনে নিচ্ছেন গাছপাকা বরই।

কলেজশিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, ‘রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম পাশে বরইবাগান। দেখতে আপেলের মতো লাল, চোখ ফেরানো যায় না। পরে কিছু বরই কিনে নিলাম।’

আরেক শিক্ষার্থী আমির হামজা বলেন, ‘ঘুরতে এসেছিলাম। বরইবাগান ঘুরে বেশ ভালো লাগল। বাড়ির জন্য বেশ কিছু গাছপাকা বরই কিনলাম।’

এ বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ নারীর। এখানে কাজের টাকায় চলছে সংসার ও সন্তানের লেখাপড়া।

মালতি সরেন নামে এক নারী শ্রমিক বলেন, ‘আমরা এখানে ১০-১২ জন কাজ করি। এখান থেকে যে টাকা পাই তা দিয়ে আমাদের দিন চলে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার পাশাপাশি কিস্তি দিতে পারছি। আরেক নারী শ্রমিক আকলিমা খাতুন বলেন, ‘আমার স্বামী দিনমজুর। সারা দিন পরিশ্রম করে সে যে টাকা উপার্জন করে, তা দিয়ে সংসার চালানো কষ্টকর। এখানে কাজ করে আমি যে টাকা পাচ্ছি, তা দিয়ে এখন আমার সংসার বেশ ভালোভাবেই চলছে।’ এদিকে অর্থকরী ফসল ধান, ভুট্টা ও গমের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করাসহ প্রশিক্ষণ প্রদান ও বিনা মূল্যে সার-বীজ বিতরণ করা হচ্ছে জানিয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের কাছে যাচ্ছেন। তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে এ উপজেলায় নানা জাতের বরই, ড্রাগন, মালটাসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের ফলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা, দেশের একবিন্দু জমিও যাতে ফাঁকা পড়ে না থাকে। সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সার্বিক নির্দেশনায় আমরা স্থানীয় কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছি।’

সর্বশেষ

জনপ্রিয়