বগুড়া প্রতিনিধি:

‘খুনের জেলা’ বগুড়া। হচ্ছে একের পর খুন। জেলার অলিগলিতে লেগে আছে রক্তের দাগ! আধিপত্য বিস্তার, পূর্ব শক্রতা ও তুচ্ছ ঘটনায় বাড়ছে হত্যাকাণ্ড। এ যেন রক্তের নেশায় মেতেছে বগুড়া! আর লাশ উদ্ধার, গ্রেফতার ও খুনের রহস্য উদঘাটনে ব্যস্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

জেলা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সাল থেকে ২০২২ (২০ নভেম্বর) পর্যন্ত বগুড়ায় ২৪০ জন খুন হয়েছেন। এরমধ্যে ২০২০ সালে খুন হন ৭৭ জন। ২০২১ সালে খুন হন ৮২ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত খুনের সংখ্যা ৮১ জন। এ হিসাবে বগুড়ায় প্রতি মাসে খুন হচ্ছেন ৬-৭ জন।

সমাজ বিশ্লেষকরা বলছেন, সমাজে আদর্শহীনতা বিরাজ করায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই বিশৃঙ্খলা থেকেই মানুষের মধ্যে জমতে থাকে অসন্তোষ ও ক্রোধ। বিচারহীনতা বা বিচারে দীর্ঘ সূত্রতার কারণে অপরাধ মাত্রাতিরিক্তভাবে সংঘটিত হতে থাকে। একপর্যায়ে খুনের মতো ভয়ানক অপরাধও সংঘটিত হয়।

বগুড়ায় খুনের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার পাশপাশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে এ জেলার কিশোরসহ সদ্য কৈশোর পেরোনো যুবকেরা। তারা খুনসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

চলতি বছরের নভেম্বর মাসের শুরুতেই খুন হন শিক্ষানবীশ আইনজীবী আব্দুল বারী চাঁন। গত ১ নভেম্বর সকালে জমি সংক্রান্ত বিরোধে সদরের চকফরিদ এলাকায় ধারালো কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে তাকে গুরুতর আহত করা হয়। পরে গত ৫ নভেম্বর সকালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমার মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। সদরের নামাজগড় এলাকায় গত ১১ নভেম্বর রাতে বিলিয়ার্ড (পুল) খেলাকে কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে ছুরিকাঘাতের জুনায়েদ আল-হাবিব বিপুল নামে এক যুবক নিহত হন। গত ৪ নভেম্বর রাতে পূর্ব শক্রতার জেরে ছুরিকাঘাতে ১৭ বছর বয়সী রবিউল ইসলাম রবিন নামে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নিহত হয়। সদরের গোদারপাড়া এলাকায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন রবিন।

এর আগে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ৯ জুন বগুড়া সদরের সাবগ্রাম ঘুনিয়াতলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে রবিন ইসলাম নামে এক তরুণকে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। গত ৩ জুন বগুড়া সদরের কলোনী বটতলা এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন আল জামিউল বনি নামে ২২ বছরের এক শিক্ষার্থী। গত ৩১ মে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ছাগলে ঘাস খাওয়া নিয়ে দ্বন্দ্বে ৪০ বছরের হানিফ প্রামাণিক নামে একজনকে ছুরিকাঘাতে খুন করা হয়।

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক পার্থ সারথী মোহন্ত বলেন, অপরাধ বিজ্ঞানের তত্ত্বমতে সমাজের আদর্শহীনতা থেকে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয় এবং তা পরবর্তীতে মানুষের মনে অসন্তোষ এবং ক্রোধ সৃষ্টি করে। এই সময়ে যখন সমাজে বিচারহীনতা বা বিচারে দীর্ঘসূত্রতা বিরাজমান থাকে, তখনই অপরাধ বেড়ে যায়। অপরাধ প্রবণতা ঠেকাতে সর্বপ্রথম সমাজে শৃঙ্খলা এবং আদর্শ ফিরিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে সব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আব্দুর রশিদ বলেন, খুনসহ যেকোনো ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান চলছে। বগুড়া জনবহুল একটি জেলা। এ জেলায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুন বেশি হয়। অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে সামাজিকভাবে আলোচনা সভা করা হচ্ছে। সকলের সহযোগিতা নিয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।