১৫ চৈত্র, ১৪৩০ - ২৯ মার্চ, ২০২৪ - 29 March, 2024
amader protidin

জাল কাগজপত্র তৈরি করে জমি বিক্রি: হারাগাছ  ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ

আমাদের প্রতিদিন
9 months ago
463


কাউনিয়া (রংপুর) প্রতিনিধি:

রংপুরের কাউনিয়ায় জমির ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অনুমোদন নিয়ে ৬০ শতাংশ কৃষি জমি বিক্রি হয়েছে। জালিয়াতিচক্রে হারাগাছ ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা রোকছেনা বেগমের  জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় মনজুম আলী নামে এক ভুক্তভোগী জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও সাব রেজিষ্টার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগে জানা গেছে, উপজেলার উদয় নারায়ন মাছহাড়ী মৌজার সাতটি দাগে ২ দশমিক ২৯ একর জমির মালিক ধজর মামুদের ছেলে এছাহাক আলী। ওই জমি আর এস এছাহাক আলীর নামে চূড়ান্ত ভাবে রেকডভুর্ক্ত হয়। যার আর এস খতিয়ান নং-১৯৬। কিন্তু উপজেলার হারাগাছ পৌর এলাকার ধুমেরকুঠি কামারটারী গ্রামের মৃত নছর উদ্দিনের ছেলে ছফির আলী ওরফে ছুফর আলী একই মৌজার ১৮৯৫, ১৮৯৯, ১৯০০ দাগে ১ দশমিক ২৪ একর জমির মালিক সেজে জাল ১৯৬ নং আর এস খতিয়ান তৈরি করেন। পরে ছফির গত জানুয়ারীর প্রথমদিকে হারাগাছ ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা রোকছেনা বেগমের যোগসাজসে সরকারি ভূমি ওয়েব পোর্টেলে জাল খতিয়ান আপলোড করেন। ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা জাল খতিয়ানটি সরকারি ওয়েব পোর্টেলে অনুমোদন দিয়ে ছফির আলীকে ২৪৮ টাকার ডিজিটাল ভূমি কর আদায় রশিদ প্রদান করে। যার রশিদ নং-৮৫৪২২৩০০৪০৫৯, তারিখ ১৫-০১-২০২৩ ইং। ছফির আলী কিউআর কোর্ড সম্বলিত ডিজিটাল ভূমি কর আদায় রশিদ এবং জাল ১৯৬ নাম্বার আর.এস খতিয়ান দিয়ে গত ৬ ফ্রেব্রæয়ারী ৪০১ নাম্বার দলিলমুলে কাউনিয়া সাব রেজিষ্টারী অফিসে স্থানীয় মোজাফফরের কাছে তিন দাগে ৬০ শতাংশ জমি বিক্রি করেন। জমির মুল্য ধরা হয়েছে সাড়ে ৭ লাখ টাকা। এদিকে জমি বিক্রি জানার পর হারাগাছ ইউনিয়ন সহকারী ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা কৌশলে সরকারি ভূমি ওয়েব পোর্টেলে ছফির আলীর পরিবর্তে আসল ১৯৬ নাম্বার আর এস খতিয়ান, জমি ২ দশমিক ২৯ একর, সাতটি দাগ ও কর আদায় ২৪৮ টাকা মালিক এছাহাক আলী নামে আপলোড করে ডিজিটাল ভূমি কর আদায় রশিদ তৈরী করে। যার রশিদ নং-৮৫৪২২৩০০৪৭৫৯, তারিখ ১৫-০১-২০২৩। বর্তমানে ছফির আলীর নামে প্রদান করা ডিজিটাল কর আদায় রশিদে কিউআর কোর্ড স্ক্যান করলে জমির মালিক এছাহাক আলী, জমির পরিমান ২ দশমিক ২৯ একর ২৪৮ টাকা কর আদায় দেখা যায়। অথচ ১৯৬ নাম্বার আর এস খতিয়ানে দলা, বাশঝাড়, ডাঙ্গা ও বাস্ত শ্রেনির ২ দশমিক ২৯ একর জমির এক বছরের কর দাড়ায় প্রায় ছয় শত টাকার বেশি।  

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুমি অফিসের কয়েকজন জানায়, ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা ইইজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে সরকারি ভুমি ওয়েব পোর্টালে কাগজ অনুমোদন দেয়। ভূমি ওয়েব পোর্টালে ডিজিটাল ভূমি কর আদায় রশিদে জমির মালিকের নাম পরিবর্তন করা যায়। তবে ওয়েব পোর্টালে অনুমোদন করা আদায়কৃত করের পরিমান, তারিখ ও ক্রমিক নাম্বার পরিবর্তন হয় না। আর একই নাম্বারে দুই ব্যক্তির নামে আর এস খতিয়ান হয় না।

একতাবাজার এলাকার বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন বলেন, সরকারি ভুমি ওয়েব পোর্টালে অনলাইনে ডিজিটাল অনিয়মের কারণে সাব রেজিস্টার, দলিল লেখক এবং জমির প্রকৃত মালিকের ওয়ারিশগণ প্রতারণার শিকার হচ্ছে। আর জমি রেজিষ্টারী হলে তা বাতিল করতে আদালতে যেতে হয়। ভুমি সংক্রান্ত মামলা খবুই জটিল।

কাউনিয়া দলিল লেখক সমিতির সভাপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন ভুমি অফিসে যদি জাল কাগজপত্র দিয়ে ডিজিটাল ভূমি কর আদায় রশিদ প্রদান করা হয়। তাহলে পরবর্তিতে আমাদের বিভ্রান্তকর অবস্থায় পরতে হয়। সরকার জমি সংক্রান্ত সমস্যা কমাতে অনলাইন সিস্টাম করেছে। আর অনলাইনে ডিজিটাল অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

কাউনিয়া সাব রেজিষ্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, গত মাসে একটি অভিযোগের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন ইউনিয়ন ভুমি অফিসে জাল খতিয়ান অনুমোদন দিয়ে ডিজিটাল ভূমি কর আদায় রশিদ প্রদান করেছে।

ভুক্তভোগী মনজুম আলী বলেন, আমি গত মাসে জানতে পারি আমাদের জমি অন্য লোক ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার যোগসাজসে ভুয়া কাগজপত্র তৈরী করে বিক্রি করেছে। ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে রেজিষ্টরকৃত ৪০১ নাম্বার দলিল বাতিল চেয়ে এবং ইউনিয়ন ভুমি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গত মে মাসে জেলা প্রশাসক, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভুমি) ও সাব রেজিষ্টারের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছি।

তবে হারাগাছ ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারি কর্মকর্তা রোকছেনা বেগম তার বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জমির জাল কাগজ তৈরীতে স্থানীয় একটি চক্র জড়িত বিষয়টি তিনি পরে জানতে পেরেছেন। তবে তার ব্যবহৃত সরকারি ল্যাপটপ থেকে জাল খতিয়ানটি আপলোড, অনুমোদন ও পরে সংশোধন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভুমি) মনোনীতা দাশ বলেন, এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ ঘটনায় হারাগাছ ইউনিয়ন ভূমি উপ সহকারী কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আর জেলা প্রশাসক ড. চিত্রলেখা নাজনীন বলেন, একই নাম্বারে দুইটি খতিয়ান ও কর আদায়ের বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কর্মকর্তাকে বলা হয়েছে।

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়