৫ বৈশাখ, ১৪৩১ - ১৮ এপ্রিল, ২০২৪ - 18 April, 2024
amader protidin

গুদামে চাল দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা, সরকারের ধান-চাল ক্রয় অভিযান অনিশ্চিত

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
952


ফাইল ছবি
বাজারদরের চেয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম

আমাদের ডেস্ক:

বাজারদরের চেয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের চিলমারিতে চলতি রোপা আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ধান-চাল কেনা প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর সরকারের এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও দু’একজন মিল মালিক ছাড়া কোন চালকল মালিক এখন কোন চুক্তি করেননি। লোকসান করে সরকারি গুদামে চাল দিতে চান না তারা। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে, চালের দাম বাড়ানোর সুযোগ নেই।

‘সরকারি গুদামে চাল দিলে এবার বেশি লোকসান গুণতে হবে। তার ওপর সরকারকে ২% হারে আয়কর দিতে হবে। তাই লাইসেন্স বাতিল হলেও চুক্তি করবো না।’

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম অফিস: চলতি আমন মৌসুমে ২২-২৩ অর্থ বছরে সরকারি খাদ্য গুদামে সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়নি। খোলা বাজারে ধান-চালের দাম বেশি পাওয়ায় এসব মিলাররা সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ করেননি।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়। ওই মাসের ২৬ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলার ৪৩ জন মিলার চাল সংগ্রহ অভিযানে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও একজন মিলারও চুক্তি করেনি। যার ফলে চলতি মৌসুমে সরকারি ভাবে আমন ধান ও চাল ক্রয় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে ২২-২৩ অর্থ বছরে সরকারি খাদ্য গুদামে ধান প্রতি কেজি ২৮ টাকা ও চাল ৪২ টাকা দরে ৪৪৮ মে.টন ধান ও ৪৮৭ মে.টন চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

মিল চাতাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাজাহান আলী জানান, সরকারি দরের চেয়ে বাজারে ধান-চালের দাম বেশি। এখন মোটা ধান প্রতি কেজি ২৮/৩৪ টাকা, আর মোটা চাল প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও চিকন চাল ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারি গুদামে চাল দিলে এবার বেশি লোকসান গুণতে হবে। তার ওপর সরকারকে ২% হারে আয়কর দিতে হবে। তাই লাইসেন্স বাতিল হলেও চুক্তি করবো না। তবে সরকার যদি বিষয়টি বিবেচনা করে মূল্য পুনঃনির্ধারণ করে তাহলে তিনি চুক্তি করবেন।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবার ৮ হাজার ৬০ হেক্টরে আমন চাষ হয়েছে। ফলনও হয়েছে বাম্পার। ফলে বাজারে ধান চালের সংকট হবে না।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মো. ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমানে বাজারে ধানের মূল্য ১১৩০ থেকে ১৩৫০ টাকা। ধান ক্রয় করে চাল তৈরি ও মিটার পাসের জন্য চাল শুকানো ও গুদাম পর্যন্ত চাল পরিবহন ও মোট বিলের ওপর মিলাদের ২ শতাংশ উৎসে কর ধার্য করায় মিলাররা চাল দিতে আগ্রহী নন।

গাইবান্ধা প্রতিনিধি জানান, বাজারদরের চেয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্য কম হওয়ায় নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও খাদ্য বিভাগের সঙ্গে ক্রয়চুক্তি করেননি চালকল মালিকরা।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি রোপা আমন মৌসুমে সরকারিভাবে প্রতি কেজি চাল ৪২ টাকা দরে কেনার সিদ্ধান্ত হয়। ওই দরে গাইবান্ধায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১১ হাজার ৯৮৬ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে খাদ্যবিভাগ।

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চালকল মালিকদের চুক্তিবদ্ধ হওয়ার শেষ দিন ছিল ২৬ নভেম্বর। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও গাইবান্ধার সাত উপজেলার ৭৫৯টি চালকল মালিকের দু-একজন ছাড়া কেউই চুক্তি করেননি। পরবর্তীতে এ চুক্তির মেয়াদ ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। সময় বর্ধিত করলেও ৪২ টাকা দরে চাল দিতে এখনো নারাজ চালকল মালিকরা।

চালকল মালিক রিসালত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী লাভলু মিয়া বলেন, ‘বাজার মূল্য থেকে বেশি দিয়ে ক্রয় করলে আমরা সরকারকে চাল দেবো। কম দামে সরকারকে চাল দিয়ে ব্যবসায়িক ক্ষতি করতে আমরা রাজি নই।’

মেসার্স রোহান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আকরাম হোসেন বলনে, ‘সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বাজারে চালের দাম বেশি। এ কারণে চালকল মালিকরা লোকসান করে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দিতে আগ্রহী না।’

জেলা চালকল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি ও আতাউর চালকলের স্বত্বাধিকারী আতাউর রহমান বাদল আমাদের প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাজারে প্রতিমণ ধানের মূল্য ১২০০-১৩০০ টাকা। তাই বাজার থেকে চড়া দামে ধান ক্রয় করে গুদামে কম দামে চাল সরবরাহ করা সম্ভব নয়। এছাড়া এ বছর সরবরাহকৃত চালের মোট বিলের ওপর সরকার ২% হারে উৎস্যকর ধার্য করেছে, যা দুঃখজনক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষতি করে কেউ ব্যবসা করবে না। তাই চালকল মালিকরা খাদ্য বিভাগের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছেন না। খাদ্য বিভাগের সঙ্গে বর্তমান বাজারদর নিয়ে জেলা চালকল মালিক সমিতির নেতার আলোচনা চলছে। আশা করি দ্রæত সমস্যার সমাধান হবে।’

জেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি ও প্রধান গ্রæপের স্বত্বাধিকারী নাজির হোসেন প্রধান আমাদের প্রতিদিনকে বলেন, ‘ধান কিনে চাল তৈরির পর মিটার পাশের জন্য চাল শুকানো ও গুদাম পর্যন্ত পরিবহনে খরচ বেশি হচ্ছে। এতে চালের দাম পড়ছে কেজি প্রতি ৪৫ টাকা। কিন্তু সরকার যে দাম ধরে দিয়েছে তাতে আমাদের লোকসান হবে ৩-৪ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কেজির কথা বলছেন কিন্তু আমারা টনের হিসাব করছি। আমাদের প্রত্যেক চালকল মালিকের টন প্রতি লোকসান হবে ৩-৪ হাজার টাকা। চালের দাম বাড়িয়ে না দিলে আমার মিল মালিকরা চাল গুদামে সরবরাহ করবো না।’

এদিকে চালের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অন্তরা মল্লিক। তিনি আমাদের প্রতিদিনকে বলেন, সরকার মোট বিলের ওপর ২% উৎস্যকর ধার্য করায় চালকল মালিকরা চাল দিতে আগ্রহী হচ্ছে না। তবে সরকারিভাবে চাল কিনতে উপজেলা ও জেলার চালকল মালিকদের বোঝানোর চেষ্টা চলছে। ৮ ডিসেম্বর বর্ধিত সময়ের মধ্যে চালকল মালিকদের সঙ্গে সমঝোতা হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়