নিখোঁজ ডুবোযান: পাওয়া যাচ্ছে আঘাতের শব্দ, আরোহীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা

আমাদের প্রতিদিন
2024-07-27 10:04:26

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

আটলান্টিক মহাসাগরের তলদেশে নিখোঁজ ডুবোযানের সন্ধানে চালানো তল্লাশির এলাকা থেকে একধরনের তীব্র আঘাতের শব্দ শোনা যাচ্ছে। প্রতি ৩০ মিনিট পর পর এমন শব্দ শুনতে পাচ্ছেন অনুসন্ধানী দলের সদস্যরা। এমন শব্দ শুনতে পাওয়াকে যানের ভেতরে আরোহীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন উদ্ধারকর্মীরা। তারা একে ‘আশার আওয়াজ’ বলছেন।

মঙ্গলবার (২০ জুন) এমন আওয়াজ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে ডুবোযানটির ভেতর থেকে সেটিকে কেউ শক্ত ধাতব কিছু দিয়ে সজোরে আঘাত করছেন। প্রতি ৩০ মিনিট পরপর এমন শব্দ শোনা যাচ্ছে। খবর বিবিসি ও ডেইলি মেইল।

যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগে পাঠানো গোপন মেমোর উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে। আটলান্টিকের ২০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। যে বিশাল এলাকায় এই তল্লাশি চলছে তা যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট অঙ্গরাজ্যের সমান।

ছোট্‌ট যানটির খোঁজে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডার নৌবাহিনী এবং গভীর সাগরে কাজ করে এমন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলো। কীভাবে এই উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে তা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কোস্ট গার্ডের রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মাউগের। তিনি বলেন, একটি সাবমেরিন এবং সনার যন্ত্র নিয়ে যানটিকে খোঁজা হচ্ছে। পানির নিচে ও ওপরে দুইভাবে খোঁজা হচ্ছে। যানটি হয়তো কোথাও ভেসে উঠতে পারে, কিন্তু তাদের যোগাযোগ যন্ত্র নষ্ট হয়ে গেছে। সেজন্য বিমান দিয়ে সাগরের ওপরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে সনার যন্ত্র ব্যবহার করে পানির নিচেও তল্লাশি করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, রোববার সাগরে ডুব দেওয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পরে ছোট আকারের ওই ডুবোযানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পানির নিচে যাওয়ার সময় ডুবোযানটিতে সাধারণত চারদিন চলার মতো জরুরি অক্সিজেন থাকে।

মধ্য আটলান্টিক মহাসাগরের সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে টাইটানিকের জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে ৮ দিনের এই ভ্রমণের জন্য আড়াই লাখ ডলার (প্রায় ২ কোটি ৭০ লাখ ৬০ হাজার টাকা) খরচ করতে হয়। নিখোঁজ ডুবোযানের আরোহীর পরিচয় প্রকাশ পাকিস্তানের অন্যতম ধনী ব্যক্তি এবং তার কিশোর ছেলে নিখোঁজ ডুবোযানের পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন। শাহজাদা দাউদ, ৪৮, যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রিন্স ট্রাস্ট দাতব্য সংস্থার বোর্ড মেম্বার এবং তার ছেলে সুলাইমান দাউদ, ১৯, ছোট্ট ওই আন্ডারওয়াটার ক্রাফটের আরোহী ছিলেন।

ব্রিটিশ বিলিয়নিয়ার হামিস হার্ডিং, বিশ্ববিখ্যাত ফরাসি পর্যটক পল-হেনরি নারজিওলট এবং ডুবোযানটির মালিক প্রতিষ্ঠান ওশানগেট-এর প্রধান নিবার্হী (সিইও) স্টকটন র‍্যাশ এই যানের পঞ্চম আরোহী ছিলেন।

তারা সমুদ্রের গভীর অন্ধকারে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। সাড়ে ১২ হাজার ফুট পানির নিচে সেই ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষ দেখার জন্য গিয়েছিলেন তারা।

শাহজাদার স্ত্রী ক্রিস্টিনা দাউদ এবং মেয়ে আলিনাসহ অন্যান্যরা এখন তাদের সবশেষ অবস্থা জানতে যন্ত্রণাদায়ক অপেক্ষা সহ্য করছেন। এ বিবৃতিতে এমনটি জানিয়েছে দাউদ পরিবার। দাউদ পরিবার পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী পরিবারের মধ্যে একটি এবং যুক্তরাজ্যের সাথে এই পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

আটলান্টিক সাগরে ডুবে যাওয়া টাইটানিক জাহাজের ধ্বংসাবশেষ দেখতে রোববার এই পর্যটকবাহী ডুবোযান সমুদ্রের তলদেশে নিখোঁজ হয়। এটিকে খুঁজে পাওয়ার জন্য ব্যাপক তল্লাশি চালানো হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড জানায়, ডুবোযানটি সাগরের তলদেশে যাওয়ার এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর এটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

টুরিস্ট ফার্ম ওশেনগেট জানিয়েছে ডুবোযানটিতে ৫ জন পর্যটক রয়েছে। তাদের উদ্ধারে সমস্ত পদ্ধতি কাজে লাগানো হচ্ছে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডুবোযানটি নিখোঁজ হওয়ার ৭০ ঘণ্টা পার হয়েছে। এর মধ্যে সব অক্সিজেন শেষে হয়ে গেছে। ফলে ডুবোযানটিতে থাকা পর্যটকদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে গেছে।