ফুলবাড়ীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের প্রতিবেদন সীমান্তে ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপনের দাবী

আমাদের প্রতিদিন
2024-12-12 21:37:13

আব্দুল আজিজ মজনু,ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম):

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী সীমান্তে ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ অর্থনৈকিত অঞ্চল স্থাপনের দাবি দিন দিন জোড়ালো হয়ে উঠছে। ইতিমধ্যেই অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচনের প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও চোখে পড়ার মত কোন কাজই সেখানে শুরু হয় নাই। তাই জেলার প্রায় দশ লাখ লোকের প্রাণের দাবি ইমিগ্রেশন চেকপোস্টসহ অর্থনৈকিত অঞ্চল স্থাপন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

জানা গেছে,কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার ২ কিলোমিটার দুরে সীমান্তবর্তি নন্দিরকুটি গ্রামের জুম্মারপাড় এলাকা। এই এলাকাটির ঠিক ওপারে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার দিনহাটা থানার কুর্শারহাট গ্রামের থরাইরাইখানা সীমান্ত এলাকা। দু’দেশের এই সীমান্ত এলাকাটি একদম সমতল। আবার দু’দেশের মানুষের একই কৃষ্টি কালচার। রয়েছে মানুষের মাঝে ভালোবাসার বন্ধন। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুড়িগ্রামকে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘোষণা করলে সরকারী ভাবে জমি নির্বাচনের কাজ শুরু হয়ে যায়। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সহজেই বাণিজ্যিক লেনদেন বিষয়ে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা দিয়ে সহজতর করা এবং ভূটানের সঙে যেগাযোগের ক্ষেত্রে দুরত্ব কম হওয়ায় ফুলবাড়ী উপজেলা প্রশাসন গত ৭ জুলাই ২০২৩ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য স্থান নির্বাচনের যৌক্তিকতা বিবেচনা করে ফুলবাড়ী সদরের পানিমাছকুটি ও তালুক শিমুলবাড়ী মৌজার সীমান্ত এলাকার ৬২.৬৬ একর জমি অধিগ্রহণের সুপারিশ করে উর্দ্ধতন কতৃর্পক্ষকে জানানো হয়।

বিভিন্ন সুত্র থেকে জানাযায়, ফুলবাড়ী উপজেলার পানিমাছকুটি ও তালুক শিমুলবাড়ীর জুম্মারপাড় সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশ ভারত আন্তর্জাতিক পিলার ৯৩৭/৮ এস ও ৯৩৮ পিলারের ধরাইখানা সীমান্ত কুর্শারহাট থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ দিনহাটা থানার দুরত ১৯ কিমি, দিনহাটা থেকে কোচবিহার ৩০ কিমি, কোচবিহার থেকে পুন্ডিবাড়ী, সোনাপুর, চিলাপাড়া ফরেস্ট গুরুদুয়ার চৌপলি হয়ে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং সেন্টার হাসিমারা ৪৭ কিমি, হাসিমারা থেকে নেপালবস্তি, দলসিং পাড়া হয়ে জয়গাওঁ ১৮ কিমি এবং জয়গাওঁ থেকে ভূটান গেট ১ কিলোমিটার। মূলত ফুলবাড়ী সীমান্ত থেকে ভারতের ভূ—খন্ড পেড়িয়ে ভূটানের দূরত্ব ১১৫ কিলোমিটার। অন্যদিকে বিভাগীয় শহর রংপুর থেকে লালমনিরহাট বুড়িমারী চেকপোস্ট ১৬০ কিঃমিঃ। ভারতের চ্যাংবান্ধা চেকপোস্ট থেকে ভূটান ফুলসিলিং এর দূরত্ব ১৬০ কিঃ মিঃ। সেখানে যদি ফুলবাড়ী জুম্মারপাড় সীমান্তে অর্থর্নৈতিক অঞ্চল ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট স্থাপিত হয় তাহলে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভূটানের ফুলসিলিং এর দূরত্ব কমে আসবে ২০৫ কিঃমিঃ সড়ক। অর্থনৈতিক ভাবে মাইল ফলক ঘটবে এ অঞ্চলে।

অন্যদিকে স্থানীয়রা যুগান্তরকে জানিয়েছে, সীমান্তবর্তি জুম্মারপাড়ে ইমিগ্রেশনসহ চেকপোষ্ট স্থাপন করা হলে ফুলবাড়ী,নাগেশ্বরী,ভুরুঙ্গামারীসহ কুড়িগ্রাম সদরের প্রায় দশ লাখ মানুষ ভারতের সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ, চিকিৎসা সেবা, ব্যবসা বাণিজ্য গড়ে উঠবে। শতশত লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। কমবে বেকারত্ব। নিয়ন্ত্রনে আসবে মাদকের অবাধ চোরাচালানী কারবার। বর্তমানে বিভাগীয় শহর রংপুরসহ এ অঞ্চলের মানুষ পাশ্ববর্তী জেলা লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থল বন্দর হয়ে অতিরিক্ত প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে ভারতে যাতায়াত করতে হয়। ফলে সময় ও যাতায়ত ব্যয় অনেকাংশে কমে যাবে ভারতগামী যাত্রীদের।

জুম্মারপাড় এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক (৬৮) জানান, আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়লে বাংলাদেশের চিকিৎসকের পরামর্শে দুইবার ভারতের ব্যাঙ্গালুর যাই। বাড়ীর কাছেই ভারত হলেও লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম বুড়িমারী হয়ে চ্যাংড়াবান্ধা ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে যেতে হয়েছে। বুড়িমারী ইমিগ্রেশন থেকে ব্যাঙ্গালর যাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার নিউ—কোচবিহার রেলস্টেশন পৌছেতে ৮৬ কিলোমিটার ও শিলিগুড়ি স্টেশন পৌছেতে ৮৫ সহ সর্ব মোট ২০০ থেকে ২৫০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। এতে সময় এবং অর্থ বেড়েছে। তিনি আরও জানান, উপজেলার জুম্মারপাড় ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট স্থাপন হলে ভারতের নিউ—কোচবিহার রেলস্টেশনের দুরুত্ব মাত্র ৪৫ কিলোমিটার। অতি অল্প সময় ও সামান্য খরচে এই পথ দিয়ে ভারত যেতে পারবো। ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

স্থানীয় গোলাম রব্বানী ও জিয়াউর রহমান জিয়া জানান, ভারতে আমাদের নিকট আত্মীয়—স্বজন অনেক আছে। যাতায়াতের দুরুত্ব বেশি হওয়া তারা পাসপোর্ট করতে সাহস পাচ্ছি না। জুম্মারপাড় সীমান্তে দিয়ে ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট স্থাপন হলে তারা খুব অল্প সময় ও অল্প খরচেই ভারতের আত্মীয়—স্বজনদের সাথে দেখা করা যাবে।

ভারতীয় জনতা পার্টির পশ্চিমবঙ্গ প্রাদেশিক প্রবক্তা ও সাবেক ভারত বাংলাদেশ ছিটমহল সমন্বয় কমিটির প্রধান সমন্বয়ক দীপ্তিমান সেনগুপ্ত মোবাইল ফোনে যুগান্তরকে জানান,  ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে একাধিক বানিজ্য পথ খোলা হলে শুধুমাত্র বানিজ্য বৃদ্ধি পাবে না তার সাথে চোরাচালান অনেক কমে যাবে। আর ২০১৫ সালে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে দুই বাংলার উত্তরাংশে নতুন করে আশার আলো সঞ্চালিত হয়েছে। ফলে দাসিয়ারছড়াসহ কুড়িগ্রাম জেলা দিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পথ চালু করা হয় তাহলে দু’দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার অবশ্যই উন্নতি ঘটাবে এবং বর্তমানে ভুটান বাংলাদেশের মধ্যে যে বাণিজ্য পথ আছে তা অর্ধেকেরও কম হয়ে যাবে। ফলে বাণিজ্য ব্যায় প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কমে যাবে বা আসবে। পাশাপাশি বানিজ্যিক সেক্টরে ভৌগোলিক পরির্বতন আনতে গেলে ভারতে অংশে কুর্শাহাট ও বাংলাদেশের অংশে ফুলবাড়ী সীমান্তের জুম্মারপাড়ে ইমিগ্রেশন স্থাপন হলে দুই দেশের সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষদের ভাগ্য উন্নয়ন গঠবে। 

ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানী সরকার জানান, ফুলবাড়ীবাসীর র্দীঘদিনের দাবি জুম্মারপাড় সীমান্তে অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট হিসাবে দেখতে চায়। জুম্মারপাড় সীমান্তে ইমিগ্রেশন বা করিডোর ব্যবস্থা চালু হওয়া খুবেই জরুরী। আমি নৌ—পরিবহন মন্ত্রনালয়ের মাননীয় নৌ—পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে ইমিগ্রেশন চেক পোষ্ট স্থাপনের জন্য জোড়দাবী জানিয়েছি। তিনি ইমিগ্রেশন চেক পোষ্ট স্থাপনের জন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। আশা করি এই সরকারের আমলেই জুম্মারপাড়ে ইমিগ্রেশন চেক পোষ্ট হতে পারে।

কুড়িগ্রাম—২ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ডাঃ মোঃ হামিদুল হক খন্দকার আমাদের প্রতিদিনকে  জানান, আমাদের এলাকার লোকজন ভারতে চিকিৎসা সেবাসহ অন্যান্য বিষয়ে প্রায় ১২৫ কিমি দুরে লালমনিরহাটের বুড়িমারী চেকপোস্ট দিয়ে ভারতে যেতে হয়। তারা আর্থিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হন। এখানে ইমিগ্রেশনসহ চেকপোস্ট হলে এটা লাঘব হবে। পাশাপাশি দেশ ভাগের পর এ অঞ্চলের লোকদের সঙ্গে ভারতীয়দের র্দীঘদিনের আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। ইমিগ্রেশন চেক পোষ্ট স্থাপন হলে সেসম্পর্ক পূণঃস্থাপিত হবে। অর্থনৈতিক ভাবে এঅঞ্চলের মানুষের পরিবর্তন ঘটবে। সেই সাথে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সেতু বন্ধনের মাধ্যমের জোড়ালো হবে সম্পর্কের।