ঘরোয়া সাংগঠনিক কাজে মনোযোগ আ.লীগের

আমাদের প্রতিদিন
2024-12-12 14:16:20

মানবিক কাজে গুরুত্ব

ঢাকা অফিস:

পবিত্র রমজান মাসে বড় কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি হাতে না নিলেও ঘরোয়া কাজগুলো এগিয়ে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে এ মাসেই অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দল নিরসন করতে চায় দলটি। এরই অংশ হিসাবে সংশ্লিষ্ট জেলা-মহানগর ও বিভাগের নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিভাজন হয়ে পড়েছে-এমন সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাদের ডেকেও কথা বলছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। রোজার মাসজুড়েই চলছে এই কার্যক্রম। একই সঙ্গে মেয়াদোত্তীর্ণ সংগঠনের সম্মেলন এবং সম্মেলন হওয়া শাখার কমিটি চূড়ান্ত করার নির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে।

অন্যদিকে এবার রোজায় ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের ইফতার মাহফিল না করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর পরিবর্তে মাসজুড়ে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে দরিদ্রদের মধ্যে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করছে ক্ষমতাসীন দল ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। ন্যায্যমূল্যের বাজার প্রতিষ্ঠাসহ নিচ্ছে নানা উদ্যোগও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এসব কর্মসূচি দলের ভাবমূর্তি বাড়াবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকরা।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, ইফতারের আনুষ্ঠানিকতা না করে আমরা ইফতার সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছি। ঈদের আগে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করব। পাশাপাশি বিভাগওয়ারি সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলোও করছি। যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, তাদের নিয়ে আমরা বসছি, আলোচনা করছি। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সঙ্গেও আলোচনা করছি। সমঝোতা ও সমন্বয় করছি যাতে আগামী দিনে সংগঠন আরও গতিশীল হয়। মেয়াদোত্তীর্ণ শাখার সম্মেলন, অসম্পূর্ণ পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার প্রস্তুতিও নিচ্ছি। তিনি আরও বলেন, মানুষ ও দেশের কল্যাণের কাজকে এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন কাজ করছে। রমজান মাস সংযমের মাস। এ মাসেও পরিকল্পিত ও পরিমার্জিতভাবে এসব কাজ আমরা এগিয়ে নিচ্ছি।

একই বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী যুগান্তরকে বলেন, রমজান মাসে আমাদের সংগঠন গোছানোর কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে, এখনো তা চলছে। ইতোমধ্যে আমরা ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ নিয়ে বসেছি। এটা চলবে। আমাদের সব সহযোগী সংগঠন এবং সারা দেশের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে সিরিজ বৈঠক চলতে থাকবে। এগুলো আমরা রমজান মাসেই শেষ করতে চাই। তিনি আরও বলেন, আগামী ৩০ তারিখ রংপুর বিভাগ এবং ৩১ তারিখে চট্টগ্রাম বিভাগের নেতাদের নিয়ে ঢাকায় বৈঠক হবে। এভাবে বাকি সবার সঙ্গেও ধারাবাহিকভাবে বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।

দলীয় সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে জন্ম নেওয়া অন্তর্কোন্দল দূর করতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এসব বৈঠক হচ্ছে। কয়েকটি জেলাকে ঢাকায় বৈঠকের জন্য সম্ভাব্য তারিখও দেওয়া হয়েছে। রোজার মাসে প্রতিদিনই দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা কোনো না কোনো বিভাগ বা জেলা-মহানগর নেতাদের নিয়ে মতবিনিময় করবেন। এসব মতবিনিময় সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সৃষ্ট বিভেদ নিরসন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে করণীয় এবং মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলোতে দ্রুততম সময়ে সম্মেলন অনুষ্ঠান নিয়ে দেওয়া হচ্ছে দিকনির্দেশনা।

ইতোমধ্যে একাধিক সহযোগী সংগঠন এবং জেলা ও মহানগর নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের নেত্রীদের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় দলের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, সভায় মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের শিগগিরই মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা কমিটির তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেন ওবায়দুল কাদের।

এছাড়া যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় এবং মহানগর উত্তর-দক্ষিণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে রাগ, অভিমান ভুলে মিলেমিশে সংগঠনের কাজ করার আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের। নেত্রীরাও এ সময় সংগঠনের গতি আরও বাড়াতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। এর আগে গত সোমবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বমুখীর লাগাম টানতে সরব দলটির নেতৃত্বাধীন সরকার। এমন অবস্থায় এবার রমজান মাসে দলীয়ভাবে ইফতার পার্টি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি। দলের হাইকমান্ড থেকে এ বিষয়ে ইতোমধ্যে দিকনির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। মূলত ইফতারে যে টাকা খরচ হবে-সেই টাকায় চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপণ্য সমাজের অসহায়, দরিদ্র ও নিুবৃত্তের মানুষের মাঝে বিতরণ করছে দলের নেতাকর্মীরা। এ বিষয়ে দল ও সহযোগী সংগঠনগুলো পৃথকভাবে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়ে কর্মসূচি পালনও শুরু করেছে।

তবে পবিত্র রমজানের পরপরই শুরু হচ্ছে স্থানীয় সরকারের বড় আয়োজন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ফলে কেন্দ্রীয়ভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন না করলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচন কেন্দ্র করে তৃণমূলে জমে উঠেছে রোজাকেন্দ্রিক নানা কর্মসূচি। ইফতার সামগ্রী বিতরণসহ নানা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নিজেদের অবস্থানের জানান দিচ্ছেন সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। নির্বাচনের প্রস্তুতি, ভোট প্রার্থনা ও সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে রমজানকে আলাদা গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় ইফতারের পাশাপাশি করছেন নির্বাচনি গণসংযোগ।