১৮ কার্তিক, ১৪৩১ - ০২ নভেম্বর, ২০২৪ - 02 November, 2024

তিস্তার চরে খাস জমি বন্দোবস্ত নেয়ার অভিযোগ

আমাদের প্রতিদিন
8 months ago
1K


'হামরা জান দেমো তাও বসুন্ধরাক জমি দেমো না'

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুরের গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর চরে বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের নামে  কৃষিজমি লীজ দেয়ার প্রক্রিয়া বন্ধের জোরালো দাবি জানিয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী। অন্যথায় কৃষিনির্ভর জীবনজীবিকাসহ কৃষিজমি রক্ষায় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

আজ বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে গঙ্গাচড়া উপজেলার ছালাপাকে তিস্তার ধুধু বালুচরের কৃষিজমিতে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এ দাবি জানান  প্রায় সহস্রাধিক কৃষক। এ সময় বিক্ষুব্ধ কৃষকসহ স্থানীয় এলাকাবাসী অবিলম্বে চরের কৃষি ও খাসজমি বসুন্ধরা গ্রুপের কাছে প্রতিকীমূল্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত করে না দিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীসহ জেলা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।

মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করা স্থানীয় কৃষকরা সাংবাদিকদের জানান, এই জমি আমাদের। শুকনো মৌসুমে তিস্তার চরের বুকে আমাদের বাপ-দাদারা চাষাবাদ করে জীবন ধারণ করতো। হঠাৎ করে কোথা থেকে বসুন্ধরা গ্রুপের লোকেরা এসে এই তিস্তার চরের খাসজমি তাদের বলে দাবি করছেন। অথচ আমরা গ্রামের অসহায় নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষজন বছরের পর বছর ধরে এসব জমিতে চাষাবাদ করে আসছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের একটাই দাবি আমাদের এই কৃষিজমি যেন বসুন্ধরা কোনভাবেই নিতে না পারে। তারা দাপট দেখিয়ে যদি এসব জমি নিয়ে নেয় । তাহলে আমাদের বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়েই ধুকে ধুকে মরে যাব।

ছালাপাক গ্রামের বাসিন্দা তাফুল ইসলাম (৬০) জানান, এই বসুন্ধরা গ্রুপ ভূমিদস্যু, তারা কোথা থেকে এসে তিস্তা চরের খাসজমি নিজেদের বলে দাবি করতেছে আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। এই গ্রুপটি কিছু দিন ধরে এই এলাকার লোকজনকে চাকরি দেয়ার কথা বলে লোভ দেখাচ্ছে। তারা নাকি আমাদের এলাকার ছেলেদের চাকরি দিবে। এই কথা বলে তারা বিভিন্ন এলাকার লোক এখানে নিয়ে এসে মালিক তৈরি করে এই তিস্তার চরের খাসজমিগুলো তাদের নিজেদের নামে করে নিচ্ছে। আমাদের সরকারের কাছে একটাই দাবি তারা কিভাবে এই খাসজমি নিজেদের নামে লিখে নিলো। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এর সঠিক তথ্য উদঘাটন করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি।

একই এলাকার আনতাজুল ইসলাম (৫৮) নামে আরেক কৃষক জানান, ‘আমাদের বাপ-দাদা এই নদীর বুকে চাষাবাদ করে গেছেন। আমরাও চাষাবাদ করছি। বন্যা-খরাসহ সবধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগে আমরা এই তিস্তাকে ঘিরেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করছি। এই তিস্তার কারণে আজ আমরা নিঃস্ব। আমরা কেনোভাবেই এই জমি বসুন্ধরাকে দিবো না।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রয়োজন হইলে এই ছালাপাকের তিস্তার চরে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে, এই জমির জন্য প্রয়োজন হলে আমরা জীবন দিয়ে দিবো। তবু আমাদের বাপ-দাদার তিস্তার বুকে যাওয়া সম্পত্তি আমরা বসুন্ধরা গ্রুপ বা অন্য কাউকে ভোগদখল করতে দিব না । মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই- আপনি মানবতার মা আমরা অসহায় এই তিস্তাপাড়ের মানুষ আপনার কাছে আমরা হাতজোড় করে মিনতি করি আপনি আমাদের এই ভূমিদস্যুদের হাত থেকে রক্ষা করেন। তা না হলে আমরা নিঃস্ব হয়ে যাব । আমরা এমনিতেই তিস্তার করাল গ্রাসে নিঃস্ব।'

কৃষক শামছুল হক বলেন, 'ছালাপাক মৌজার মধ্যদিয়ে তিস্তা নদী প্রবাহিত হয়ে প্রতি বছর চর পড়ে ও কৃষি উপযোগী জমি হিসাবে ব্যবহৃত। এই ছালাপাক মৌজার সম্পত্তি আমাদের পূর্ব পুরুষরাও ব্যবহার করেছেন। এখন আমরাও সেখানে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। এখানকার চাষিরা দীর্ঘ প্রায় ৫০-৫৫ বছর ধরে আলু, মিষ্টি কুমড়া, চিনা বাদাম, পেঁয়াজ, রসুন, ধানসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করে আসছে। আমাদের উৎপাদিত ফসল রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এই জমিতে সোনার ফসল ফলে।'

তিনি বলেন, 'অত্যন্ত দুঃখের বিষয় বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানী লিমিটেড বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে চরের কৃষিজমিসহ খাসজমিগুলো

অকৃষি জমি হিসেবে দেখিয়ে বেআইনি ও কিছু কুচক্রী মহলের যোগসাজসে নিজেদের দখলে নেয়ার অপচেষ্টা ও পায়তারা করছে।'

মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও সাধারণ কৃষকরা।  পরে তারা উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

এদিকে উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বেকারত্ব দূরকরণের উদ্দেশ্য বংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলাধীন ছালাপাক ও আলাল মৌজায় শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য

'বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড' এর নামে খাসজমি প্রতিকীমূল্যে দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের জন্য সরেজমিনে তদন্তপূর্বক নীতিমালার আলোকে প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত বছরের ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের রাজস্ব শাখা থেকে পাঠানো একটি চিঠিতে গঙ্গাচড়া উপজেলার ছালাপাক মৌজার আরএস ১নং খতিয়ানভুক্ত ৩৪৩টি দাগের ৫০৪.০২৫০ একর এবং আলাল মৌজার আরএস ১নং খতিয়ানভুক্ত ৩টি দিয়ারা দাগের ৪৮২.৮৯০০ একরসহ সর্বমোট ৯৮৬.৯১৫ একর খাসজমি দীর্ঘমেয়াদি প্রতিকীমূল্যে বন্দোবস্ত দেয়ার প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কৃষকদের অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।' অন্যদিকে কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে বসুন্ধরা অয়েল এন্ড গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শাহীনুর আলম বলেন,

আমরা রেকর্ডভুক্ত মালিকানা জমি কিনেছি। আমরা কেন সরকারি খাসজমি বা কৃষকের জমি দখল করতে যাবো। তবে এখন পর্যন্ত বসুন্ধরা গ্রুপ চরের কতটুকু জমি কিনেছে, এ বিষয়ে কিছু বলেননি এই প্রজেক্ট ম্যানেজার।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth