২৭ ভাদ্র, ১৪৩১ - ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ - 11 September, 2024
amader protidin

ছেলের চিন্তায় ঘুম নেই শহীদ আবু সাঈদের পরিবারের

আমাদের প্রতিদিন
1 month ago
372


পীরগঞ্জ রংপুর প্রতিনিধিঃ

বাবা মার স্বপ্ন পূরোন করতে গিয়ে শহিদ হলেন পীরগঞ্জের আবু সাঈদ। পরিবারের অনেক সদস্য তার মধ্যে মেধাবী ছাত্র ছিল সে। পরিবারের সদস্যদের আশা ছিল তাকে নিয়ে। তার মৃত্যুতে হাত-পা যেন ভেঙে গেছে পরিবারের সকল সদস্যদের।

দরিদ্র সংসার পরিবারের ৭ ভাই বোন কেউ  পড়ালেখা করতে পারিনি বাবা মা । অসহায় ও দরিদ্র সংসারে ভ্যান চালিয়ে বাবা তাকে যতদূর পারছে লেখাপড়া জন্য সাহায্য করেছেন।

তাদের সবার স্বপ্ন ছিলো সাঈদকে নিয়ে, সব স্বপ্ন ভেঙে গেলো বলে এখনো তারা কান্নাকাটি করছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত বেরোবি শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা বাবনপুর গ্রামের মোঃ মকবুল হোসেন এর ঘরে জন্ম নেয় আবু সাঈদ। তার ২ মায়ের মধ্যে প্রথম মা মৃত্যুর পরে তার মাকে বিয়ে কারনে বাবা মকবুল হোসেন।

বড় বোন মরিয়ম বেগম বলেন, দরিদ্র হলেও আমাদের পরিবারের ভাই বোন ৭ জন। আমার কখনো কাউকে পর আপন ভাবিনি। ভাই আমাদের লেখাপড়া করে অনেক ভালো ছাত্র হয়েছে আমরা তার জন্য দোয়া করি এবং সে লেখাপড়া শেষ করে ভালো চাকুরী পাবে এতেই আমরা খুশি। আজ সেই ভাই আমাদের কে  ছাড়িয়ে চলে গেলো। সকাল স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল।

১৬ জুলাই দুপুরে রংপুর নগরীর পার্কের মোড়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় সড়কে  কোটা আন্দোলনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হন আবু সাঈদ। তার নিহতের ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে আসে এলাকায়। আবু সাঈদ  বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ছোটবেলায় অভাবের সংসারের কোনমতে খেয়ে না খেয়ে বড় হয়েছেন আবু সাঈদ। অভাবের সংসার তারপরও বাবা ভ্যান চালিয়ে পড়ালেখার খরচ যোগান দিতেন। আবু সাঈদ জাফর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ৫ ম শ্রেণির পাস এবং খালাশপীর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে এসএসসি পাস করেন। এরপরে রংপুর সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসিতে একই ফলাফল করে উত্তীর্ণ হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন । তার পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ জোটাতেন আবু সাঈদ।  বড় আশা করে ২ টি গরু এবং জমি বিক্রি করে বাবা মা তার জন্য দুটি ইটে ঘর তৈরির কাজ শুরু করেছেন। ঘরের কাজ আজও শেষ করতে পারেনি।  আজ  তিনি নতুন ঘরের পিছনে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন । পরিবারের একমাত্র মেধাবী ছেলেকে হারিয়ে কান্নাকাটির রোল যেন থামছে না আজও। তার মা মনোয়ারা বেগম মাটির ঘরের দেয়াল ধরে কাঁদছেন আজও।

বড়ো ভাই রমজান আলী জানান, আমার ভাই শহিদ হবার পর থেকে কোনো প্রশাসনের লোকজন খোঁজ খবর নেয়নি।

ভাই কোরবানি ঈদের ছুটিতে এসে বাড়িতে ২ দিন এবং বন্ধুর বিয়েতে ১ দিন ছিলো। এরপরে সে রংপুরে যায়। ঘটনার ৪ দিন আগে ভাই আমাকে ফোন দিয়ে মা বাবাসহ সকলের খোঁজ খবর নিয়েছে তার পরে আর কোনো কথা হয়নি ভাইয়ের সাথে। ময়মনসিংহ, খুলনা, নারায়নগঞ্জ এবং লালমনিরহাটের লোকজন আমাদের শারিরীক অবস্থা দেখতে আশে। এদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের কে বাজার খরচ এবং নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেছে। শুক্রবার সকালে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক এসে তাদের পরিবারের খোঁজ খবর নিয়েছেন।

আবু সাঈদ এর বাবা মকবুল হোসেন জানান, ঘটনার রাতে পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ইকবাল হাসান আবু সাঈদ এর মরাদেহ রাতারাতি দাফন কাজ সম্পন্ন করতে তাদের কে  চাপসৃষ্টি করে। তার পরেও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় পরে দিন ৯ টার সময় জাফর পাড়া মাদ্রাসা মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

তার বোনেরা বলছেন, আমাদের ভাই এভাবে রেখে যাবে সেটা কখনো ভাবিনি। ভাই আমার কে ছেড়ে গেছে মেনে নিতে পারছি না। আমার ভাই রোকেয়া ভার্সিটিতে ইংরেজি নিয়ে অর্নাস করত। ভাইকে আমরা বলছিলাম ভাই বিসিএস কিভাবে করে । আমার ভাই বলছিলো তোমার আশাটা পূরণ করতে আমি চেষ্টা করব। আমার ভাই আমার আশা পূরণ না করে কোথায় গেলো। আল্লাহ আমার ভাইকে কোথায় পাব। ভাইয়ের জন্য নতুন বাড়ি তৈরি করছে বাবা এখন সেই বাড়িতে কে থাকবে।

গ্রাম প্রতিবেশিরা জানান,আবু সাঈদ এর বাড়িতে প্রতিদিন তার বন্ধু বান্ধব ও হিতাকাঙ্ক্ষীরা দলেদলে আসছেন এবং তার কবর জিয়ারত করছে। দরিদ্র পরিবারের ছেলে সে সকলের আশাভরসা ছিল আবু সাঈদ। সে শুধু ভালো ছাত্রই নয় গ্রামের মধ্যে ভালো একজন ছেলে হিসাবে পরিচিত ছিল তার। তাকে যে পুলিশ মেরেছে তার বিচার চায়। তার পরিবারের ২ ভাই বোন এসএসসি পাস রয়েছে এবং এই পরিবারের দুই সদস্য কে সরকারি চাকুরী দেয়ার আহ্বান জানান এলাকাবাসী।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়