১ কার্তিক, ১৪৩১ - ১৬ অক্টোবর, ২০২৪ - 16 October, 2024

দায়িত্ব পালন ছাড়াই বাড়িতে বসে লাখ টাকার বেতন নিচ্ছেন বেরোবি রেজিস্ট্রার

আমাদের প্রতিদিন
1 month ago
218


আনোয়ার হোসেন,বেরোবি প্রতিনিধি :

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের(বেরোবি) রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মোঃ আলমগীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন ছাড়াই বাড়িতে বসে লাখ টাকার বেতন নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ।

সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, ট্রেজারারসহ ৪০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন। তাদের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে একমাত্র দায়িত্বে বহাল থাকা ব্যক্তি রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরী এই পরিস্থিতিতেও নিজের ইচ্ছামতো ছুটি কাটাচ্ছেন ।

জানা যায়,প্রথম নিয়োগের পর থেকেই তিনি অনিয়মিত অফিস করেন । তবে গত ফেব্রুয়ারিতে শেষ নিয়োগ পাওয়ার পর অনিয়মিত তো বটেই, বেশির ভাগ দিন ছুটি কাটিয়েছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য ও একমাত্র আবাসিক কর্মকর্তা হিসেবে রেজিস্ট্রারের অনুপস্থিতিতে স্বাভাবিক কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় কোনো প্রশাসন না থাকায় অনিরাপদ বলেও মনে করেন শিক্ষার্থীরা।এমন পরিস্থিতিতে রেজিস্ট্রার চলে যাওয়ায় প্রশাসনের মধ্যে চলছে সমালোচনা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৫ ফেব্রুয়ারি২০২৪ ৩য় বারের মতো চুক্তিভিত্তিক তাকে পুনঃনিয়োগ দেওয়া হয়। সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়ার পর ৩০ এপ্রিল ২০২৪ পর্যন্ত ৮৬ দিনের মধ্যে ৫৩ দিনই ছুটি কাটিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতি মাসে লাখ টাকা বেতন নেওয়া রেজিস্টার আলমগীর চৌধুরী । মাঝে ২০ দিন বিরতি দিয়ে আবার টানা ৪০ দিনের ছুটি কাটাতে দেশের বাইরে যান। আবারও ৭ আগষ্ট অসুস্থতার কথা বলে ছুটিতে তার নিজ বাড়ি চট্রগ্রামে চলে যান।কতদিনে অফিসে যোগদান করতে পারবেন তা উল্লেখ করেনি। তবে চিঠিতে তিনি লেখেন,সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে যোগদানের আশা রাখি। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনূস বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আসবেন শুনে ৯ আগষ্ট রাতে ক্যাম্পাসে তড়িঘড়ি করে চলে আসেন।এরপর আবার ২ সেপ্টেম্বর কাউকে না জানিয়ে ছুটিতে চলে গেছেন বলে প্রশাসনিক ভবন থেকে জানা যায়।

আরও জানা যায়, রেজিস্টার বছরের পর বছর অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজের একটি রুম দখল করে আছেন। এমনকি উপাচার্যের নামে বরাদ্দকৃত একটি গাড়িও সার্বক্ষণিক ব্যবহার করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল বন্ধ করলেও তিনি তার গাড়ি সার্বক্ষণিক ব্যবহার করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন।

রেজিস্ট্রারকের নিকটস্থ এক কর্মকর্তা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কিছু বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।যেহেতু কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর বাস চলছে না আপনার গাড়ি চললে শিক্ষার্থীরা সমালোচনা করছেন। তাই আমি রেজিস্টারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছিলাম।কিন্তু তিনি গ্রাহ্য করেননি।

এরআগে চুক্তির শর্ত ভেঙে গত বছর অবৈধভাবে প্রায় দেড় লাখ টাকা ঈদ বোনাস নিয়েছিলেন প্রকৌশলী আলমগীর চৌধুরী। এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে ইউজিসির নির্দেশনায় ওই অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য হন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো এক বছরের জন্য রেজিস্ট্রার পদে সর্বসাকূল্যে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৬০ টাকা বেতনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালের অবসরে যাওয়া প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী। এরপর ইউজিসি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ আরো কয়েকটি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ার ক্ষেত্রে নীতিমালা প্রণয়ন করে এবং রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও পরিচালকসহ অন্যান্য পদে পূর্ণকালীন কর্মকর্তা নিয়োগের নির্দেশনা দেয়। এই নীতিমালা ও নির্দেশনা অমান্য করে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দ্বিতীয়বারের মতো চুক্তিভিত্তিক পুনঃনিয়োগ পান তিনি। সর্বশেষ চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি আবারো ইউজিসির নির্দেশনা ও চুক্তিভিত্তিক কর্মকর্তা নিয়োগ নীতিমালা, ২০২২ লঙ্ঘন করে এক বছরের জন্য তাকে চুক্তিভিক্তিক পুনঃনিয়োগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রশাসনিক ভবনের একাধিক কর্মকর্তা - কর্মচারী বলেন,রেজিস্টার হঠাৎ কি কারণে গেছেন বলতে পারি না। তিনি কবে আসবেন সেটাও জানিয়ে যাননি।

এ বিষয়ে জানতে রেজিস্ট্রার আলমগীর চৌধুরীকে  অনেকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth