দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ
দিনাজপুর প্রতিনিধি:
প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুদ থাকলেও বন্ধ হয়ে গেছে কয়লা ভিত্তিক দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন। যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) থেকে বন্ধ হয়ে যায়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু করতে অন্তত দুই সপ্তাহ সময় লাগতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানাযায়, পাশ^বর্তী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লার উপর ভিত্তি করে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পর্যায়ক্রমে মোট তিনটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। এই তিনটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৫২৫ মেগাওয়াট। এর মধ্যে ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ১ নং ইউনিট, অনুরূপ ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ২ নং ইউনিট এবং ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৩নং ইউনিট। যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে গত ৭ সেপ্টেম্বর বন্ধ হয়ে যায় প্রথম ইউনিটটি। এর আগে ২০২০ সাল থেকেই বন্ধ ছিলো দ্বিতীয় ইউনিটটি।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান ইলেকট্রো হাইড্রলিক ওয়েল পাম্প (টারবাইন জেনারেল) নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গত সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) থেকে ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তৃতীয় ইউনিটটিও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন।
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন, চুক্তিবদ্ধ চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্টানের (হারবিন) সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তবে তারা জানিয়েছে যন্ত্রাংশ পাঠাতে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে।
প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক আরও জানান, ঠিকাদারী ওই প্রতিষ্টানের সাথে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত ৫ বছরের চুক্তি আছে যে, তারা সব খুচরা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করবে। কিন্তু গত ৫ বছরে তারা একটি যন্ত্রাংশও সরবরাহ করেনি। তাদের বারবার চিঠি দিয়েও কোন সাড়া মিলেনি। চুক্তি থাকার কারনে ওই খুচরা যন্ত্রাংশ আমরাও কিনতে পারছিনা।
তিনি জানান, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি টারবাইন চালাতে দুইটা ইলেকট্রো হাইড্রলিক ওয়েল পাম্প লাগে। ২০২২ সালে একটি ইলেকট্রো হাইড্রলিক ওয়েল পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। তখন থেকে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানে চিঠি দেয়া হলেও তারা যন্ত্রাংশ সরকরাহ করেনি। ফলে একটি পাম্প দিয়েই এতদিন ইউনিট চালু ছিল। সেই একটি পাম্পও সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নষ্ট হওয়ায় পুরো প্লান্ট বন্ধ হয়ে গেছে।
প্রধান প্রকৌশলী জানান, আমরা চুক্তিবদ্ধ চীনা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। চীনা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে—চীন থেকে যন্ত্রাংশ সরবরাহে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। বাংলাদেশে এই যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়না। ফলে তা কেনাও যাচ্ছেনা।
এদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সংশ্লিষ্টরা জানান, তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালাতে দৈনিক ৫ হাজার ২’শ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে মজুদ রয়েছেন প্রায় আড়াই লাখ মেট্রিক টন কয়লা। কিন্তু কয়লা খনিতে কখনোই তিনটি ইউনিট এক সাথে চালানো হয়নি।
উল্লেখ্য, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লার উপর ভিত্তি করে ২০০৬ সালে চীনা কারিগরী সহায়তায় দিনাজপুরের পার্বতীপুরে ১ হাজার ৬৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। প্রত্যাশা ছিলো, দেশের উত্তরাঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো। প্রথম অবস্থায় মোট ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দুটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। পরে আরও ২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন আরেকটি ইউনিট স্থাপন করা হয়। মোট ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কখনোই পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে পারেনি। শুরু থেকেই একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটির মধ্যে থাকে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।