১৮ কার্তিক, ১৪৩১ - ০২ নভেম্বর, ২০২৪ - 02 November, 2024

পিস করে ইলিশ মাছ বিক্রি করছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা

আমাদের প্রতিদিন
3 weeks ago
140


ফাইল ফটো

আমাদের ডেস্কঃ

এখন ১ পিস ইলিশও কিনতে পারবে রাজশাহীবাসী বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এমন একটি ঘোষণা। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাজশাহী ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের উদ্যোগে এবং রাজশাহী মৎসজীবী সমিতির আয়োজনে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হবে।

বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) ছিল সরকারি ছুটির দিন। রাজশাহীর সাহেব বাজারে ছিল মানুষের ভিড়ে। মাছ বাজারের ক্যাচাল বলতে আমরা যা বুঝি এদিন মাছ বাজারে সেই ভিড়টিই ছিলো। কিন্তু ১১টা বাজলেও ইলিশ বিক্রেতাদের কাটা মাছ বিক্রি করতে দেখা গেলো না। এর কিছুক্ষণ পরই মাছের বাজারে কয়েকজনকে নিয়ে ঢুকলেন রাজশাহী ব্যাবসায়ী সমন্বয় পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী। ডানপাশে মাছ দোকানি আবুর অবস্থান। কিন্তু তার কাছে খুব বেশি ইলিশ নেই। চিংড়ি আছে, আছে অন্য মাছও। তবে তার পাশের দেয়ালে কাটা ইলিশ মাছ বিক্রির একটি ব্যানার ঝুলছে।

যেখানে লেখা বাংলাদেশে এই প্রথম এমন বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে আয়োজকরা। সেকেন্দার আলী সেই ব্যানারের সামনে দাঁড়ালেন। পাশে বেশ কয়েকজন। সামনে গণমাধ্যম কর্মীরা ছবি তোলায় ব্যস্ত। পুরো গলি ভিড় ভাট্টায় ভর্তি। সাধারণ ক্রেতারা হাঁটতে পারছে না, ঠেলে ভেতরে যাচ্ছেন আর কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করছে কি হয়েছে এখানে? অনেকে তো যেতে না পেরে গালি দিয়ে ফিরে যাচ্ছে। একটি হ্যান্ড মাইক নিয়ে সেকেন্দার আলী মিনিট দশেক ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাটা ইলিশ মাছ কিনতে বললেন। তারপর তার সঙ্গে থাকা কয়েকজন কাটা ইলিশ মাছ কেনার জন্য পলিথিন ব্যাগে কিছু মাছ নিয়ে ওজন করলেন। এই ২শো, আড়াইশো, চারশো গ্রামের কয়েকটি প্যাকেট মেপে মেপে পাশে সিলভারের থালাতে রাখলেন। ছবি তোলা শেষ। এবার বক্তব্যের পালা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সেকেন্দার আলী এমন উদ্যোগের পেছনের কারণ বললেন।

তিনি জানান, সম্প্রতি ইলিশের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় সকলে তাদের চাহিদা মতো যেন এই মাছ খেতে পারছেন না। সবাই যেনো ইলিশ মাছের স্বাদ নিতে পারে তার জন্য মৎসজীবী সমিতির সঙ্গে কথা বলে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যেখানে ১০০, ২০০ গ্রাম মাছও মানুষ কিনতে পারছে। যদি কোন ব্যবসায়ী এই পরিমান মাছ দিতে অপারগতা প্রকাশ করে তাহলে মৎসজীবী সমিতি অথবা তাদের কাছে অভিযোগ জানাতে পারে ক্রেতা।

এ কার্যক্রম কতোদিন চলবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, যতোদিন ইলিশের চাহিদা ও বিক্রি বহাল থাকবে ততোদিন চলবে। সকল মাছ ব্যবসায়ীকে বলে দেয়া হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে ব্যবসায়ী নেতা ফরিদ মামুদ হাসান ও সেকেন্দার আলী বেরিয়ে গেলেন।

এবার সংবাদ কর্মীরা আবারও আবুর দোকানে গেলেন। কিন্তু কেটে মাছ বিক্রিতে তাদের ঘোর আপত্তি। অভিযোগ ২ হাজার টাকার মাছ কেটে বেচতে গেলে ক্রেতা পেটি ও ভালো পিস ছাড়া নিতে চাইছে না। তাহলে মাথা লেজ আমরা কি করবো বলে প্রশ্ন রাখলেন। একই প্রশ্ন রাখেন সামনের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী মোবায়দুর রহমান। এতোক্ষণ তার দোকান থেকেই মাছ এনে এখানে কেটে কেটে বিক্রি করা হচ্ছিলো। তিনি বলেছেন, ২ হাজার টাকার মাছ কেটে বিক্রি করলে তো ১৯০০ টাকারও কমে বিক্রি হবে। লাভ কোথায়? বরং কেটে বিক্রি করলে দাম বেশি রাখতে হচ্ছে এতে ক্রেতার অসন্তোষ রয়েছে।

তাহলে কি আপনারা আর কেটে ইলিশ বিক্রি করবেন না? প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, দেখা যাক আল্লাহ ভরসা। এ পুরো সময় জুড়ে মোবায়দুর তার দোকানে কিন্তু একটি মাছও পিস হিসেবে বিক্রি করেনি।

কাটা মাছের পিস কিনেছেন এমন ক্রেতার মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি আমরা। অন্তত ১৫ মিনিট ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে লাবনী খাতুন মাছ কিনেছেন ৪০০ গ্রাম। দাম পড়েছে আটশো টাকা। কিন্তু মাছের পিস নিয়ে তিনি বেজায় অসন্তুষ্ট। বারবার বলতে শোনা যায়, এসব অভিনব প্রতারণা ব্যবসায়ীদের। অভিযোগ চাহিদা মতো পছন্দের পিস তাকে দেয়া হয়নি।

এদিকে হরনাথ রায় নামের এক ক্রেতা তিনটি পলিব্যাগে মোট ৬০০ গ্রাম মাছ কিনেছেন। তিনি বেজায় খুশি দেখে তার কাছে প্রশ্ন ছিলো কাটা মাছে লাভ না লস? উত্তর সোজা সাপটা, যেটা লাউ সেটাই কদু। এক কোজির মাছ পুরোটা না কিনে ৬০০ গ্রাম কিনেছেন। এতেই তিনি খুশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমাদের কথা হয়। তিনি জানান, ইলিশের দাম যখন ৫০ টাকা পোয়া, অর্থাৎ দুশো টাকা কেজি ছিলো তখনও এই বাজারে মাছ কেটে বিক্রি হয়েছে। সময় গড়াতে গড়াতে ক্রমাগত দাম বাড়তে থাকলে বিক্রেতারা কেটে মাছ বিক্রিতে আগ্রহ হারান। কারণ বেশ কিছু অংশ ক্রেতা নিতে চায় না। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েন তারা। এখন এমন উদ্যোগ কতোটা কার্যকরী? এমন প্রশ্নে এ ব্যবসায়ীর উত্তর, ওই যে কলকাতায় এক পোয়ার ইলিশে ২০ পিস করে দাও ভিডিওটা ছড়িয়েছে না, সেটা দেখে একই ফর্মুলায় যেতে চান ব্যবসায়ী নেতারা। তাছাড়া পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে এই নেতারা রাজশাহী চেম্বারসহ বিভিন্ন স্থানে পদে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এগুলো সেটারই প্রতিফলন। আদতে ইলিশ মাছ পিস হিসেবে এখানে এখন কেউ বিক্রি করবে না। অন্তত হাফ কেজি না নিলে বিক্রেতার ক্ষতি।  নগরীর কেন্দ্রে থাকা এই মাছ বাজারে অন্তত ২০ জন ব্যাবসায়ী ইলিশ মাছ বিক্রি করেন। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র একজন ৭টি মাছ কেটে বিক্রি করেছেন অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে। একটু দূরে গিয়ে আমরা একাধিক ইলিশ বিক্রির দোকানে মাছের কাটা পিস কিনতে ইচ্ছা প্রকাশ করি। কিন্তু বিক্রেতারা রাজি হননি।

পরবর্তীতে দুপুর দেড়টার দিকে সেই বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমন ভাবে ইলিশ মাছ বিক্রি উদ্যোগের কার্যক্রম ব্যবসায়ী নেতারা এবং গণমাধ্যম কর্মীরা ফিরে আসার পরপরই বন্ধ হয়ে গেছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth