১৮ কার্তিক, ১৪৩১ - ০২ নভেম্বর, ২০২৪ - 02 November, 2024

কুড়িগ্রামে ১ কোটি টাকা ঋনে আবেদন  পত্রের হিড়িক, নেই সংগঠনের অস্তিত্ব : আশঙ্কা প্রতারণার ফাঁদ

আমাদের প্রতিদিন
2 days ago
43


কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ  

কুড়িগ্রামে লাখ থেকে কোটি টাকা পুঁজির জন্য ঋন দেওয়ার নামে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন পত্র বিতরণ করছে "অহিংস গণ অভূথান বাংলাদেশ'' নামে একটি সংগঠন। তবে আবেদনটি একটি উড়ো চিঠির মত মনে করছেন স্থানীয়রা। কেউ বলছেন এটি প্রতারণার নতুন ফাঁদ।

কেননা মাঠে কোন কর্মী বা সংগঠকের সঠিক তথ্য কিংবা সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করতে পারে নাই ঋণ প্রত্যাশিরা। প্রাথমিকভাবে ভুঁইফোড় সংগঠন মনে করে অসংখ্যনমানুষজন প্রতারিত জালিয়াতির ফাঁদে পড়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে সংগঠনটির আহবায়ক ,, মোস্তফা আমীন সংগঠনটির দ্বায়ভার নিয়ে বলেন, সংগঠনটি দেশের মানুষের সাথে কোন প্রকার প্রতারণা করবে না, কেউ আবেদন পত্র বিক্রির নামে অর্থ লেনদেন করে থাকলে আইনের আশ্রয় নেয়ার আহবান জানান তিনি।

আবেদন পত্রটিকে লেখা আছে-পুঁজির জন্য ঋণের আবেদন - বিপুল ত্যাগ রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে শান্তি পূর্ণ অহিংস পন্থায় আইনের দ্বারা গঠিতব্য "অবৈধ অর্থ উদ্ধার গণমুখী বিনিয়োগ জাতীয় সংস্থা "বরাবরে পূঁজির জন্য ঋনের আবেদন। ভ্যাট টেক্স সেবার নামে সর্বস্তরের জনগণ থেকে আদায় করা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার একটি বড় অংশ, স্বাধীনতার পর থেকেই,লুটপাট, বিদেশে পাচার করা হয়েছে। জনগণের কাষ্টার্জিত এসব অর্থ প্রস্তাবিত জাতীয় সংস্থা কর্তৃক উদ্ধার করে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদন, ব্যবসায় বানিজ্য আয় বৃদ্ধি তথা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বার্থে বিনা সুদে,বিনা জামানতে সহজ কিস্তিতে পরিশোধ যোগ্য লক্ষ টাকা থেকে কোটি টাকা পর্যন্ত ঋনের মাধ্যমে পুঁজির যোগান দেয়ার পরিকল্পিত কর্মসূচির আওতায় ঋন পেতে আগ্রহীদের আবেদন।

 সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের মাদাজল গ্রামের ঋন প্রত্যাশী মানুষ জনের সাথে কথা বলে জানা যায়, অহিংস গণ অভ্যূথান বাংলাদেশ দুঃস্থ সংগঠনটি অসহায় মানুষের জন্য বিনা শর্তে লক্ষাধিক টাকা ঋন দিবে।এ কারনে সংগঠনটির নির্দিষ্ট আবেদন পত্র পুরন করে ঢাকা অফিসে পাঠাতে হবে।আবেদনপত্রটি ঋণ প্রতাশিদের ফটোকপি করতে হবে।কোন জাতীয় পরিচয় পত্র, ছবি ছাড়াই প্রতি ফরমে ২০ জন মানুষের নাম, বয়স,জন্ম তারিখ,পেশা,মোবাইল নম্বর, স্বাক্ষর সহ পুরন করে অফিসের ঠিকানায় পাঠাতে হবে।পরে আবেদনপত্রের সুত্র ধরে লাখ থেকে কোটি টাকা ঋন প্রদান করবেন বলে জানান ঋন প্রত্যাশিরা।

কথা হয় মাদাজল গ্রামের ঋণ প্রত্যাশী মোঃ ছাত্তার আলীর সাথে তিনি বলেন, কাঁঠালবাড়িতে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন এই ফরম পূরণ করেছে।ওদের দেখাদেখি আমার মেয়ে ফজিলা একটি ফরম ফটোকপি করে নিয়ে আসছে।আমরা এখানকার ২০ জন নারী পুরুষ ফরম পূরণ করে রেখেছি। বড় কালিরপাট এলাকার রফিকুল হাজি নামের এক লোক ফরমগুলো নিয়ে গেছে। পরে খোঁজ নিয়ে দেখেছি কাঁঠাল বাড়িতে বড় কালির পাট নামে কোন স্থান নেই। আর ঠিকানায় রফিকুল হাজি নামে কোন লোক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ফজিলা বেগম বলেন, আমি ওই লোককে দেখেছি উনি ফরম দিয়ে লোকজনের নাম পুরন করে নিয়ে গেছেন।কাগজ যাচাই বাছাই হওয়ার পর সবাইকে ঋন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।তবে উনার মোবাইল নম্বর চাইলেও নম্বর দিয়ে যান নাই। ফরমে ঋন চাওয়া ব্যাক্তিদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হবে আশ্বাস দিয়ে চলে গেছেন।

আরেক ঋন প্রত্যাশি হুজুর আলী বলেন, আমরা ফরম পূরণ করেছি।এ বিষয়ে কাউকে এখন পর্যন্ত কোন টাকা দেই নাই। তবে মনে হচ্ছে ফরমে নাম টিকে গেলে টাকা চাইতে পারে।আমরা মূর্খ মানুষ ঘটনা নিয়ে একটু আতঙ্কে আছি।

গণ অভ্যূস্থান আন্দোলন পরিষদের আহবায়ক পরিচয়ে মোস্তফা জামান আমীন বলেন, আমরা সারা বাংলাদেশ থেকে এখন পর্যন্ত কোটি ৫০ লাখ মানুষের স্বাক্ষরসহ ফরম হাতে পেয়েছি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর্রবর্তি বিভিন্ন নেতা নেত্রীর লুঠপাট অর্থ উদ্ধার করে সংগঠনের মাধ্যমে জনগণের মাঝে টাকাগুলো ঋন হিসেবে দিয়ে দেবো। নভেম্বর মাসের ২৫ তারিখ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লক্ষাধিক মানুষকে নিয়ে আমরা একটি সমাবেশ বিক্ষোভ মিছিল করবো। কেননা লুঠপাট করা অর্থ দেশের জনগণের। আমরা সেই অর্থ দেশের মানুষের প্রয়োজনে ব্যবহার করবো বলে জানান তিনি।

হলোখানা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ রেজাউল করিম রেজা বলেন, বিষয়টি সন্দেহজনক। অপরিচিত লোকজন গ্রামে গ্রামে ঘুরে সহজ সরল মানুষদের কাছে এসব ফরম পুরোন করে নেয়। আমি অবহিত হওয়ার পর বিষয়টি দেখতেছি।কোন ব্যাক্তি যাতে প্রতারণার শিকার না হয় ব্যাপারে খোঁজ খবর নিচ্ছি।

 

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইউএনও সাঈদা পারভীন বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। তারপরও  বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছি। ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth