গঙ্গাচড়ায় সাব-রেজিস্টারের অপসারণের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ ও কলম বিরতি
গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধিঃ
রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আওয়ামী পরিবারের লোক হিসেবে নিজেকে পরিচয়দানকারী ফ্যাসিবাদের দোসর দুর্নীতিবাজ ঘুষখোর সাব-রেজিস্টার রিপন চন্দ্র মন্ডলের অপসারণের দাবিতে রোববার সাব-রেজিস্টার অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ, বিক্ষোভ করেছে ছাত্র-জনতা ও দলিল লেখকগণ। এছাড়া কলম বিরতি পালন করেছে দলিল লেখকগণ।
প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তরা জানান, গঙ্গাচড়ায় সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে রিপন চন্দ্র মন্ডল যোগদানের পর থেকে জমির কাগজপত্র সঠিক থাকলেও কৃত্রিম উপায়ে কাগজপত্রে ভুল বের করে মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন। এ দাবি জমির বিক্রেতা বা ক্রেতা পুরুন করলে সে দলিল রেজিস্ট্রি করেন। এমনকি নামের একটি অক্ষর গড়মিল পেলে সে দলিলটিও টাকা ছাড়া রেজিস্ট্রি করেন না। অক্ষরে গড়মিল নামের দলিলে ইউপি চেয়ারম্যানের প্রত্যায়ন দিলেও তা তিনি গ্রহন না করে বলেন, চেয়ারম্যানের নয় আদালত থেকে নিতে হবে। আবার টাকা পেলে নামের অক্ষর গড়মিল সব ঠিক হয়ে যায়। এভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে ঘুষ চাওয়ার কারণে জমি দলিল কমে আসছে। এতে মানুষজন হচ্ছে হয়রানী। সপ্তাহে দুদিন অফিস করার কারণে অনেক দলিল করতে হয়। সাব রেজিস্ট্রার যে দলিলগুলোর ঘুষ নেয় সেগুলো রেজিস্ট্রি করেন। বাকীগুলো না করে ৪ টার মধ্যে অফিস ত্যাগ করেন। ঘুষ গ্রহনের বিষয়ে দলিল লেখকগণ জানান, গত ১৫ জুলাই ঠাকুরাদহর গোলাপজনগং ৬.৪১ শতক জমির দলিল ৬০ হাজার টাকা উৎকোচ নিয়ে রেজিস্ট্রি করেব। একইভাবে দক্ষিণ কোলকোন্দের শ্যামল চন্দ্র ১০ সেপ্টেম্বর সাড়ে ১১ শতক জমি দানের ঘোষণা দলিল ২০ হাজার টাকা উৎকোচের মাধ্যমে করেন। ২৯ জুলাই গঙ্গাচড়া বাজারে ৮ শতক জমি ৫০ লক্ষ টাকা মূল্য শ্রেনী বানিজ্যিক হওয়ায় উৎস কর বাবদ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে এবং পরে ২ লক্ষ টাকা নিয়ে রেজিস্ট্রি করেন। সাব রেজিস্ট্রারকে ঘুষ বানিজ্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের লোকজন বললে তিনি পাল্টা বলতেন আমিও আওয়ামী পরিবারের লোক। পরিচয় দিতেন ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলনে ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী বর্তমানে হত্যা মামলায় জেলে থাকা রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তুষার কান্তি মন্ডলের ভাগ্নের। ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের পতনের পর এখন কৌশল পাল্টিয়ে ঘুষ দাবি করছে। দলিল লেখক সমিতির সভাপতি চাঁদ সরকার বলেন, প্রত্যেকটা দলিলে কৃত্রিম উপায়ে ভুল বের করে আইনের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন সাব রেজিস্টার ।
তাকে ঘুষ দিলে দলিল হয় আর না দিলে দলিল হয় না। এতে দলিল লেখকরা প্রতিবাদ করলে তাদেরকে লাইসেন্স বাতিলের হুমকি প্রদান করা হয় । মূলত তিনি ঘুষ বাণিজ্যের জন্যই এ ত্রুটি বের করেন। আমরা সাব রেজিস্টরের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আর দলিল সম্পাদন কাজ করবো না। ছাত্র নুর রেজা, রাকিব, শাকিল, শহিদুল বলেন, ফ্যাসিবাদের কোথাও ঠাঁই নেই। ফ্যাসিবাদ থাকলে নুতন বাংলাদেশের সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ঘুষ বানিজ্য করবে। দ্রুত ফ্যাসিবাদের দোসর সাব রেজিস্ট্রারের অপসারণ চাই। স্থানীয় ফজলু, আলতাব, সোবহান বলেন, ঘুষ বানিজ্য করে জনভোগান্তিকারী ফ্যাসিবাদ সাব রেজিস্ট্রারের অপসারণ করে সেবারমান নিশ্চিত করতে হবে।
এ ব্যাপারে সাব রেজিস্টার রিপন চন্দ্র মন্ডল তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কতিপয় দলিল লেখক আমাকে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে দলিল করতে বলেন। আমি এতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা আমাকে অপসারণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। আওয়ামী লীগ নেতার ভাগ্নের পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে বলেন, সে সময় অনেকে কাগজ ঠিক না থাকার পরও আওয়ামী পরিচয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে চাপ দিতো, তাই অবৈধ চাপ থামাতে পরিচয় দিছিলাম। তুষার কান্তি মন্ডল আমার কেউ নন। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলিল লেখক সমিতির সহ-সভাপতি নুর ইসলাম নান্টু, আবু জাফর, আজিজুল হাকিম, দলিল লেখক শফিকুল ইসলাম চাঁদ, মজিদুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল, আনিচুর রহমান, আবুল কালাম, মিঠু সরকার প্রমুখ। প্রতিবাদ সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে ছাত্র-জনতা অংশগ্রহণ করে।