১ মাঘ, ১৪৩১ - ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ - 14 January, 2025

১৩ ডিসেম্বর বিরলের বহলা ট্রাজেডী দিবস

আমাদের প্রতিদিন
1 month ago
83


আতিউর রহমান, বিরল (দিনাজপুর):

কাল ১৩ ডিসেম্বর বিরলের বহলা ট্রাজেডী দিবস। এদিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাতে শহীদ হয়েছিল ৩২ টি তাজা প্রাণ। এই গ্রামে এদের একত্রে গণকবর দেয়া হয়েছিল। এক যুগ পূর্বে গণকবরটিতে দৃষ্টিনন্দন একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে।

বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্যদিয়ে বহলা ট্রাজেডী দিবস উদযাপন করা হলেও এবার সরকারি বা স্থানীয়ভাবে কোন কর্মসুচি গ্রহনের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে বাঙালী সংঘবদ্ধ মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পাক সেনারা পিছু হাঁটতে থাকে। এই দিনে উপজেলার ভান্ডারা কিংবা রাণীপুকুর ইউপি থেকে পাকসেনারা পিছু হেঁটে দিনাজপুর শহরের দিকে আসতে থাকে। সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে কাঞ্চন জংশন এবং রেলব্রীজ সংলগ্ন বিজোড়া ইউপি’র বহলা গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে পথিমধ্যে নিরীহ গ্রামবাসীর নিকট মুক্তিবাহিনীর সংবাদ জানতে চায় পাক হানাদার বাহিনী। কারণ এ গ্রামের সন্নিকটে সারাঙ্গাই-পলাশবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল, যা আশপাশেই হবে মর্মে অনুমান করেছিল তারা। কিন্তু কোন গ্রামবাসী মুখ খুলেনি। ফলে প্রথমে তাদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পরবর্তিতে আবার একত্র হয়ে পুরুষদের সারিবদ্ধভাবে দাড়াতে বলে পাক সেনারা। কিছুক্ষণের মধ্যে মাগরিবের নামাজ হবে জানিয়ে গ্রামবাসী নামাজ আদায় করতে চাইলে নামাজের অনুমতি পায়। নামাজ শেষ হওয়ার মুহুর্তে আবারো সারিবদ্ধ হতে বলেই নির্মম ফায়ারিং শুরু হয়। নিমেষেই ৩২ টি তরতাজা প্রাণ হারিয়ে যায়। দু’জন বাদে এদের সবাইকে একত্রে গণকবর দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছরেও এরা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি পাননি। তাদের অনেকের পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটালেও সরকারের পক্ষ হতে সহানুভূতি বঞ্চিত হয়ে রয়েছে অনেক পরিবার। এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদ সুত্রে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহীদ ও আহতদের তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে বেশ কয়েকবার। এখনোও গেজেট আকারে তালিকা প্রকাশ হয়নি।

এছাড়াও সেদিন আহত অবস্থায় বেঁচে যান ৫ জন। পরের দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ১৪ ডিসেম্বর বিরলসহ দিনাজপুর শত্রু মুক্ত হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ব্যাক্তিরা জানান, ২৯ মার্চ/৭১ দিনাজপুরবাসী বিডিআর সেক্টর সদর দপ্তর কুঠিবাড়ীতে হামলা চালিয়ে দখল করে নেয়। সেখানকার রসদ লুট করে আনা হয় বহলায়। তাছাড়া এই বহলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ঘাটি। তাই খান সেনাদের আক্রোশ ছিল এ গ্রামের উপর। ফলে সেদিন গ্রামের নিরীহ পুরুষদের সারিবদ্ধ ভাবে গুলি চালোনো হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তারা। পরবর্তীতে গুলিবিদ্ধ আনিছুর নামের এক ব্যক্তি নিজ খরচে দু’দফা অপারেশনের মাধ্যমে গুলি শরীর থেকে অপসারণ করেছেন।

বিগত বছরগুলোতে বিভিন্ন কর্মসুচির মধ্যদিয়ে বহলা ট্রাজেডী দিবস উদযাপন করা হলেও এবার সরকারি বা স্থানীয়ভাবে কোন কর্মসুচি গ্রহনের সংবাদ পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth