৬ চৈত্র, ১৪৩১ - ২১ মার্চ, ২০২৫ - 21 March, 2025

দীর্ঘ ৬ বছর পর রাবিতে শিক্ষক নিয়োগ: পরিবর্তন নয়, আগের নীতিতেই নিয়োগ কার্যক্রম শুরু

আমাদের প্রতিদিন
1 month ago
104


রাবি সংবাদদাতা:

দীর্ঘ ছয় বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ভাইভা বোর্ডের মাধ্যমে এই প্রতীক্ষিত নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর ধাপে ধাপে অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষক নিয়োগ অনুষ্ঠিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এবারের নিয়োগ নীতিমালা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। অনেকে ধারণা করেছিলেন, দীর্ঘদিনের অচলাবস্থার পর নিয়োগ নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন আসতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব জানিয়েছেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া ২০২২ সালের নীতিমালার ভিত্তিতেই পরিচালিত হবে এবং এতে কোনো পরিবর্তন আসবে না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সময় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ ওঠে, যেখানে তার মেয়ে ও জামাতাকে বিশেষ সুবিধা দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই অনিয়ম তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় ২০২০ সালের ১০ ও ১৩ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে।

তবে, শিক্ষার গুণগত মান বজায় রাখতে এবং একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সচল রাখতে রাবি প্রশাসনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। এবার সেই স্থগিত নিয়োগ কার্যক্রমই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে।

রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রাবিতে বর্তমানে ১,৪৯০টি অনুমোদিত শিক্ষক পদের মধ্যে ৪৪০টি পদ শূন্য। অবসরে গেছেন ৫৮ জন শিক্ষক, কিছু শিক্ষক মারা গেছেন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১:৩৫, যেখানে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে এটি হওয়া উচিত ১:২০। ফলে নতুন নিয়োগ কার্যক্রম বাস্তবায়িত হলে এই সংকট কিছুটা হলেও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

২০২২ সালের নীতিমালার ভিত্তিতে এবার শিক্ষক নিয়োগ হবে। এই নীতিমালা অনুযায়ী—অনার্স ও মাস্টার্সে ন্যূনতম সিজিপিএ ৩.৫ থাকতে হবে, প্রার্থীকে মেধাক্রমে ১-৭ এর মধ্যে থাকতে হবে, বিশেষ ক্ষেত্রে সিজিপিএ ৩.৫-এর নিচে হলেও তা শিথিলযোগ্য হবে এবং ইউজিসির নির্দেশনা অনুসারে বিবেচিত হবে।

সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আবদুস সোবহানের সময়ে নিয়োগ নীতিমালা শিথিল করে সিজিপিএ ৩.২৫ এবং মেধাক্রমের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছিল, যা ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের পরিপন্থী ছিল। এরপর তদন্তে অনিয়ম প্রমাণিত হলে সেই নিয়োগ বাতিল করা হয় এবং নতুন নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, "বিজ্ঞপ্তির শর্ত অনুযায়ী নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। তবে নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে আমরা নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করবো।"

দীর্ঘদিনের অপেক্ষার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ শুরু হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। নতুন নিয়োগ কার্যক্রম কতটা স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth