সারা দেশে বিএনপির মিছিল-সমাবেশ আজ
ফাইল ছবি
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে তৃণমূলে বার্তা
আসছে ফের নতুন কর্মসূচি
ঢাকা অফিস:
সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ বিভিন্ন দাবিতে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। কর্মসূচি সফলে নানা কৌশলে এগোচ্ছে তারা। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি আরও জোরদার করার পরিকল্পনা করছে সরকার বিরোধী এসব দল। এজন্য কারও ফাঁদে পা না দিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের জন্য তৃণমূল নেতাকর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আজ সব মহানগর ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে বিএনপি। এ কর্মসূচি একই সঙ্গে পালন করবে সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, চার দলীয় বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, এলডিপি ও মন্টু নেতৃত্বাধীন গণফোরামও। তবে জামায়াতে ইসলামী আনুষ্ঠানিকভাবে এদিন কোনো কর্মসূচি দেয়নি। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দলটি শনিবার সারা দেশের মহানগর ও জেলায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
বিএনপি সূত্র জানায়, রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টায় প্রথমে সমাবেশ হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে থাকবেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এরপর নেতাকর্মীরা মিছিল বের করবেন। তবে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি পেলেও মিছিলের (রাত ৯টা পর্যন্ত) অনুমতি পায়নি দলটি। নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বাকশাল গঠনের দিন ২৫ জানুয়ারি কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে। দলটির একাধিক স্থায়ী কমিটির সদস্য জানান, বিএনপির কর্মসূচিকে ঘিরে কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করুক বা কোনো ধরনের সংঘাত হোক, সেটি তারা চান না। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক থাকতে দলীয় নেতাকর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, মূলত আওয়ামী লীগ পালটা কর্মসূচি দিয়ে বিএনপিকে ভয় দেখাতে চায়। একই সঙ্গে বিএনপির মিছিল-সমাবেশে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চায়। ক্ষমতাসীন দলের নানা বাধা সত্ত্বেও বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে ব্যাপক নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ থাকবে। এজন্য প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে শনিবার সন্ধ্যায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি কোনোভাবেই উসকানিতে পা দেবে না। কর্মসূচি যাতে শতভাগ শান্তিপূর্ণ হয়, সেটি দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, জনসম্পৃক্ত এ কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে।
ডিসেম্বর থেকে সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিলের মাধ্যমে আন্দোলনের সূচনা হয়। এরপর ১১ জানুয়ারি গণ-অবস্থান ছিল যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি।
জানা গেছে, সমমনা রাজনৈতিক দলের মধ্যে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আজ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করবে সাত দলের গণতন্ত্র মঞ্চ। এছাড়া দুপুর ২টা থেকে ১২ দলের জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট পুরানা পল্টনে, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে (পূর্ব প্রান্তে) থেকে চার দলীয় বাম গণতান্ত্রিক ঐক্য, দুপুর ২টা থেকে পূর্ব পান্থপথের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এলডিপি বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করবে। এছাড়া আজ ১২ দলীয় জোট চট্টগ্রাম শহরের প্রেস ক্লাব চত্বরে ও কাল রাজধানী ঢাকার বিজয়নগরে এ কর্মসূচি পালন করবে। গণফোরামের সভাপতি মোস্তফা মহসীন মন্টু ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী এক যৌথ বিবৃতিতে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে শান্তিপূর্ণ মিছিল ও সমাবেশে একাÍতা প্রকাশ করেন। তারা বলেন-অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকার আবশ্যক। জনগণের ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের একমাত্র সমাধান নির্দলীয় সরকার। গণফোরাম গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সোচ্চার থাকবে এবং গণতন্ত্রমনা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ঐকমত্য পোষণ করবে।
শিগগিরই ঘোষণা রাষ্ট্র মেরামতের যৌথ রূপরেখা
সূত্রমতে, সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে সামনে আরও বেশকিছু কর্মসূচি দেবে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো। একপর্যায়ে নিয়মতান্ত্রিক এ কর্মসূচিকে হঠাৎ জোরালো করার কথা ভাবছেন তারা। এর আগে রাষ্ট্র মেরামতের (ক্ষমতায় গেলে) যৌথ রূপরেখা ঘোষণা করা হবে। এ নিয়ে দলগুলোর লিয়াজোঁ কমিটি কাজ করছে। রোববার সন্ধ্যায়ও বিএনপি ও গণতন্ত্র মঞ্চের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা এ নিয়ে বৈঠক করেছেন।
জানা গেছে, গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র মেরামতের ১৪ দফা ঘোষণা করা হয়। আর বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয় ২৭ দফা। এ দফাগুলো সমন্বয় করে একটি যৌথ রূপরেখা করার কাজ চলছে। এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য গণতন্ত্র মঞ্চের পক্ষ থেকে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে। তারা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটি যৌথ রূপরেখা তৈরি করবেন। যা শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
রোববারের বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, বৈঠকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের দশ দফা ও রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্র মঞ্চ কিছু প্রস্তাব করেছে। আরও কারও প্রস্তাব থাকলে আলাপ-আলোচনা করে যৌথ রূপরেখায় তা স্থান দেওয়া হবে।