জয়ের পথে হিরো আলম!
গুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ উপনির্বাচন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
হিরো আলমের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ডিশ ব্যবসা করে কিংবা কেউ কেউ বলেন চানাচুর বিক্রি করে। এরপর এক এক করে বিভিন্ন পেশায় নিজেকে জড়িয়েছেন হিরো আলম। খাটো, অসুন্দর চেহারা, শুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে না পারলেও নিজেই একসময় বানাতে শুরু করেন চলচ্চিত্র, মিউজিক ভিডিও, গান। যেগুলোর মান নিয়ে নিঃসন্দেহে কথা বলবার আছে। কিন্তু, হিরো আলমের মতো করেই আমাদের মধ্য থেকে কয়জন এভাবে দাঁড়াতে পারবে? কতো জন হিরো আলমের মতো মুখ ফুটে সত্য কথা বলতে পারবেন? আর কত জনই বা তার মতো এতো বিদ্রুপের পরেও থেমে না গিয়ে নিজের পথে অটুট থাকতে পারব আমরা?
আশরাফুল আলম ওরফে ডিশ আলম ওরফে হিরো আলম। এই মানুষটিকে বলা যায় বিগত দুই বছরে বাংলাদেশের একটি প্রধান সেনশনাল চরিত্র। বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিম্ন মানের বিভিন্ন ভিডিও, চলচ্চিত্র, গান, কবিতা বানিয়ে বিনোদন দিয়ে বর্তমানে যিনি দেশের মানুষের মুখে মুখে। সর্বশেষ আসন্ন বগুড়া উপ নির্বাচনে এমপি পদে প্রার্থী হয়ে দেশের রাজনীতিতেও পা রেখেছেন আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম।
হিরো আলম এতোদিন সামাজিক যোগাযোগ ভিত্তিক বিনোদনের খোরাক থাকলেও নানান সময় আলোচনায় এসেছেন জাতীয়ভাবে। কখনো দেশের বড় বড় তারকারাও কথা বলতে ছাড়েননি তাকে নিয়ে। রাজনীতিতে এমপি পদে ভোট যুদ্ধে লড়াইয়ের পর নতুন করে জাতীয় অঙ্গনে আবারও আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে হিরো আলম। কেউ বিষোদ্গার করে বলছেন- হিরো আলমের রাজনৈতিক যোগ্যতা কতোটুকু? আসলেই সে পার্লামেন্টে বসবার যোগ্য কিনা?
তবে কেউ কেউ আবার সময়ের পট পরিবর্তনে হিরো আলমের পক্ষেই কথা বলছেন। দেশের বর্তমান হালচিত্র বিবেচনায় অনেকেই বলছেন- এতো এতো দুর্নীতিগ্রস্থ লোকেরা পার্লামেন্টে বসতে পারলে হিরো আলমের মতো একজন সাধারণ মানুষ এবং অনেকাংশেই যিনি কিনা আমাদের অনেক এমপিদের মতো দুর্নীতিগ্রস্থ না তিনি পার্লামেন্টে বসলে সমস্যাটি কোথায়?
বলা যায়, হিরো আলমকে ঘিরে দেশে এখন দুইটি পক্ষ দেখা যাচ্ছে। একদল চাইছেন হিরো আলম যেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন। আরেক দল অনেকটা প্রতিবাদের মতো করেই চাইছেন হিরো আলম নির্বাচনে লড়ুক এবং সম্ভব হলে জয়টাও ছিনিয়ে আনুক।
বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম-কাহালু উপজেলা) ও বগুড়া-৬ (সদর উপজেলা) আসনে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী হিসেবে ইতিমধ্যে হিরো আলম রেকর্ড গড়েছেন। অতীতে বড় দলের প্রার্থীগণ একাধিক আসনে প্রতিদন্দ্বিতা করলেও বগুড়ায় তথা দেশে কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী একই সঙ্গে দুই আসনে সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি।
বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) ও বগুড়া-৬ (সদর) সহ বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ৬টি আসনে উপনির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বগুড়া সদরের এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কেন্দ্রে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন হিরো আলম। ভোট দেওয়ার পর তিনি বলেন, সুষ্ঠুভাবে ভোট হলে আমি দুই আসনেই বিপুল ভোটে জয়লাভ করব। এখন পর্যন্ত সব পরিবেশ ভালো আছে। তবে সদরের (বগুড়া সদর) এক কেন্দ্রে আমার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ভোটারদের কাছে অনুরোধ সবাই এসে ভোট দেবেন।
তবে ভোটগ্রহণ শেষে হিরো আলম সমার্থকরা মনে করছেন হিরো আলম ভোটের দিক থেকে এগিয়ে আছেন। সুষ্ঠুভাবে ভোট গণনা হলে তারাই জয়লাভ করবে। হিরো আলমের অফুরন্ত আত্মবিশ্বাস ও টিকে থাকার লড়াই দেখে অভিভূত ও সন্তুষ্ট হয়ে তাকে নিজের গাড়ি উপহার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এক শিক্ষক।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের নরপতি গ্রামের হাজি আব্দুল জব্বার জি এল একাডেমি অ্যান্ড হাই স্কুলের অধ্যক্ষ এম মুখলিছুর রহমান এ ঘোষণা দেন।
মুখলিছুর রহমান বলেন, ‘আমি কখনও ফালতু ভিডিও করি না। আমি ওয়াদা করলাম হিরো আলমকে আমার নোয়া গাড়িটি উপহার দেব। তিনি উপনির্বাচনে পাস করুক আর হেরে যাক, যেটাই হোক বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) সকালে সিলেটের চুনারুঘাট এসে তিনি যেন গাড়িটি নিয়ে যান। ইতোমধ্যে আমি গাড়ির সকল কাগজপত্র তৈরি করে রেখেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেট হচ্ছে বাংলার দ্বিতীয় লন্ডন। তাই আমি সিলেটবাসীর সম্মান কোনোভাবেই নষ্ট করতে চাই না। সবাই আমার ভিডিওটি সেভ করে রাখেন, স্ক্রিনশর্ট দিয়ে রাখেন। আমি যে ওয়াদা করেছি তার বরখেলাপ হবে না। সেই সঙ্গে হিরো আলম নির্বাচনে জয়ী হবেন বলে শুভকামনা জানিয়েছেন তিনি।’
সবশেষে ওই শিক্ষক বলেন, ‘হিরো আলম একেবারে জিরো থেকে হিরো হয়েছেন। জীবনে অনেক কষ্টের সম্মুখীন হয়েছেন। তাই নিজের ব্যবহৃত ৬ লাখ টাকা দামের গাড়িটি তাকে উপহার দেব।’
বগুড়া-৪ ও বগুড়া-৬ দুই আসনে উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে চলছে গণনা। এ দুই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলম। তবে প্রার্থিতা পেতে বেশ প্রতিবন্ধকতা পাড়ি দিতে হয়েছে তাকে। সব বাধা উতরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন তিনি।