১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ - ০২ মে, ২০২৪ - 02 May, 2024
amader protidin

মাঠে লড়াই করার প্রার্থীও খুঁজে পাচ্ছে না বিএনএম ও তৃণমূল বিএনপি

আমাদের প্রতিদিন
5 months ago
578


ঢাকা অফিস:

যদিও বিএনএমের নেতৃবৃন্দ বলছে, তারা ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দিতে সক্ষম হবে এবং ৫০ জন মাঠে লড়াই করার মতো প্রার্থী। আর তৃণমূল বিএনপি বলছে, হেভিওয়েট প্রার্থীদের তারা খুঁজছে না। যাদের ভাবমূর্তি ভালো এবং এলাকায় প্রভাব আছে তাদেরকেই দলে সম্পৃক্ত করেছে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণার সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ও তৃণমূল বিএনপি দুটি দলই বলেছিল তারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিবে এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন দল থেকে সাবেক সংসদ সদস্যরা তাদের দলে যোগ দিবেন। কিন্তু মনোনয়ন দাখিলের শেষ মুহূর্তে এসেও দুই দলে মাঠে লড়াই করার মতো ২০ জন প্রার্থীও খুঁজে পাওয়া যায়নি।

যদিও বিএনএম এর নেতৃবৃন্দ বলছে তারা ৩০০ আসনেই এককভাবে প্রার্থী দিতে সক্ষম হবে এবং ৫০ জন প্রার্থী মাঠে লড়াই করার মতো প্রার্থী। আর তৃণমূল বিএনপি বলছে, হেভিওয়েট প্রার্থীদের তারা খুঁজছে না। যাদের ভাবমূর্তি ভালো এবং এলাকায় প্রভাব আছে তাদেরকেই তাদের দলে সম্পৃক্ত করেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তারা শক্তিশালী বিরোধী দল গঠন করতে পারবে। ১০০টির মতো আসনে তারা জয়ের আশা দেখছেন।

বিএনএম বলছে, সাবেক প্রায় ১২ জন সংসদ সদস্য তাদের দলে যোগ দিয়েছেন যারা নিজ নিজ আসন থেকে জয়ী হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি, পুলিশের সাবেক ডিআইজি সহ নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও কয়েকজন ব্যবসায়ী দলে যোগদান করেছেন। এদের মধ্যে সব মিলিয়ে ১৫ জনের মতো নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখেন বলে দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

 

গত ২০ নভেম্বর বিএনপি ছেড়ে বিএনএম এর নেতৃত্বে আসেন সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্যকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করে নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করে বিএনএম।

এছাড়াও দলে আগ থেকেই বিএনপির আরও তিন সাবেক সংসদ সদস্য বিএনএম এ যুক্ত আছেন। তারা হলেন: ঝিনাইদহ-১ আসনের আব্দুল ওহাব, সুনামগঞ্জ-৪ আসনের দেওয়ান শামসুল আবেদীন এবং বরগুনা-২ আসনের আবদুর রহমান।

এরপর শুক্রবার জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি মীর হাসমত আলী, নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার সাজেদুল করিমসহ ১১ জন বিএনএম এ যোগদান করেন।

যদিও দলটি শুরু থেকে বলে আসছে, তাদের দলে আরও ৩০ থেকে ৩৫ জন সাবেক সংসদ সদস্য যোগ দেবেন।

সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনএম এর প্রতিষ্ঠাকালীন আহবায়ক আবদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এবারের নির্বাচন সরকার ২০১৪, ২০২৮ সালের নির্বাচনের মতো করতো পারবে না। আমাদের ৫০ জনের মতো ফাইট করার মতো প্রতিনিধি আছেন বিভিন্ন আসনে। মানুষ সরকারের বিপক্ষে, নৌকার বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত। আমরা সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে চাই।"

বিএনএম এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, "আমাদের সাথে অনেক লোক আসছে তবে আশানুরূপ নয়। আরও আশা করেছিলাম যে অনেকেই আসবেন। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।" অপরদিকে তৃণমূল বিএনপিতে তেমন কোনও প্রভাবশালী প্রার্থীকে দলে নিয়ে আসতে পারেনি।

নেতৃত্বে থাকা দলটির চেয়ারম্যান বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী ও মহাসচিব বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা তৈমুর আলম খন্দকার। এছাড়া ২ জন জাতীয় পার্টির, একজন আওয়ামী লীগের ও একজন এলডিপি থেকে নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য দলটির মনোনয়ন নিয়েছেন। এর বাইরে পরিচিত কোনো রাজনীতিককে এখন পর্যন্ত দলটি টানতে পারেনি।

এদের মধ্য থেকে ৫/৬ জন প্রার্থী মাঠে অন্যদলের প্রার্থীদের সাথে লড়াই করার মতো বলে ধারণা করছেন দলটির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল বিএনপির এক সিনিয়র নেতা বলেন, "দলে অনেকেই আসছেন যাদের গুড ইমেজ রয়েছে কিন্তু নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো ক্যাপাবিলিটি নেই। আবার অনেকেই মনোনয়ন নিচ্ছেন এমনটা দেখানোর জন্য যে, ‘সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছি'। দলে যেভাবে লোকজন আসার কথা সেভাবে আসেনি। দল ৪/৫ টি আসন পেলেই খুশি।"

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, "বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হচ্ছে তৃণমূল বিএনপি। আমরা উঁচু তলার লোক পছন্দ করি না, আমরা পেশাজীবি লোকদের জায়গা দিচ্ছি।"

তিনি আরও বলেন, "যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয় তবে আমরা শক্তিশালী বিরোধী দল গঠন করতে পারবো। আর যদি সুষ্ঠু নির্বাচন না হয় তবে নির্বাচন কমিশনের ইট খুলে ফেলবো। নির্বাচন কমিশনের ইট খুলে ফেলবে এদেশের জনগণ। নির্বাচন কমিশন বলতে কোনও প্রতিষ্ঠান থাকবে না।"

যা দেখা গেল দল দুটির কার্যালয় ঘুরে

গত রোববার বিএনএম এবং তৃণমূল বিএনপির অফিস ঘুরে দেখা যায়, দুই দলের অফিসের চিত্র ভিন্ন ভিন্ন। গুলশান-২ এর গোলচত্বরের কাছে প্রায় ২৫০০ বর্গফুটের কার্যালয় নিয়েছে বিএনএম। এখনও অফিস পুরোপুরি সাজানো হয়নি। অফিসের মিটিং কক্ষে কেন্দ্রীয় কমিটির কয়েকজন বসে আছে এবং এক পাশে দপ্তর সম্পাদক মনোনয়ন ফরম বিক্রি করছেন ও জমা নিচ্ছেন। অফিসে ৪/৫ জন এসে মনোনয়ন ফরম পূরণ করছে।

 

অপরদিকে তৃণমূল বিএনপির পল্টনের ছোট একটি অফিসের ভিতরে ও বাইরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মনোনয়নপ্রার্থীরা ভিড় করে ছিল। অফিসের ভিতরে বিভিন্ন বিভাগ থেকে আসা মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হচ্ছে।

তবে দুই দলের অন্তত ২৫ জন মনোনয়ন জমা দেওয়া প্রার্থীর সাথে কথা হলে তাদের অধিকাংশই জানায়, নির্বাচনে জয় লাভের থেকে অংশগ্রহণটাই তাদের কাছে বেশি আমেজের। বিগত দিনগুলোতে তারা বিভিন্ন দলের সাথে সম্পৃক্ত থাকলেও দলের কাছে তারা অবহেলিত ছিলেন। ফলে জনগণের কাছে যেতেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

তবে এদের মধ্যে কেউ কেউ বলছেন, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হলে তারা নির্বাচিত হবেন।

রাজশাহী-২ আসন থেকে বিএনএম এর মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন মো. কামরুল হাসান মাসুদ। তিনি বিএনএম এ যোগদানের আগে বিএনপির আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

কামরুল হাসান মাসুদ বলেন, "বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলেরই শাসনামল এদেশের মানুষ দেখেছে। এদেশের মানুষ পরিবর্তন চায়, আমরা সেই সুযোগটি নিচ্ছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে আমরাই এগিয়ে থাকবো। নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলেও এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে নির্বাচন করছি সেটাই বড় পাওয়া।"

ঝিনাইদহ- ২ আসন থেকে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়ন নেওয়া এডভোকেট জামিউল ইসলাম জোয়ারদার বলেন, "আমি ২০১৬ থেকে আছি দলের সাথে। এক সময় বিএনপির সাথে ছিলাম। আওয়ামী লীগ-বিএনপি দুই দলকেই মানুষ দেখছে। তারা ভিন্ন কিছু চায়। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখছি।"

 

আওয়ামী লীগ থেকে এসে তৃণমূল বিএনপিতে যোগ দেওয়া মুনসীগঞ্জ ২ আসনের জাহানুর রহমান সওদাগর বলেন, "আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ছিল না। আমি জনগণের সাথে যারা সম্পৃক্ত আছেন তাদেরকে নিয়ে এগোতে চাই। সংসদে গিয়েই দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের আইন পরিবর্তন করতে চায়।

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়