১৮ বৈশাখ, ১৪৩১ - ০১ মে, ২০২৪ - 01 May, 2024
amader protidin

আশ্বাস না পেয়ে অনেকের ইউটার্ন:এমপি হওয়ার নিশ্চয়তা চায় ছোট দলগুলো

আমাদের প্রতিদিন
5 months ago
542


ঢাকা অফিস:

নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে ছোট দলগুলোর নেতারা পুরোপুরি নিশ্চয়তা চাচ্ছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থিতা ‘ছাড়ে’র বিনিময়ে এমপি নির্বাচিত হতে আগ্রহী তারা। কিন্তু কৌশলগত কারণে সরকারের হাইকমান্ড দলীয় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে রাজি নয়। এ কারণে ছোট দলগুলোর অনেক নেতা শুরুতে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী হলেও এখন সেই অবস্থান থেকে সরে আসছেন।

নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে, আলোচিত নতুন দল তৃণমূল বিএনপি এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের (বিএনএম) সঙ্গে আসন সমঝোতা প্রশ্নে গতকাল সোমবার পর্যন্ত সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কোনো আলোচনা হয়নি। ‘কিংস পার্টি’খ্যাত এই দুই দলের ব্যাপারে শুরুতে অনেক আলোচনা, জল্পনা-কল্পনা ও জনমনে কৌতূহল থাকলেও এখন পর্যন্ত বিএনপি বা অন্য দল থেকে চোখে পড়ার মতো কাউকে যোগদান করতে দেখা যায়নি। বড় ধরনের যোগদান অনুষ্ঠানের জন্য গত ২৫ নভেম্বর দলটি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন ভাড়া নিয়েও আগের দিন তা স্থগিত করে দেয়।

এমপি হওয়ার আশায় বিএনপির সাবেক কিছু এমপি ও নেতা বিএনএম ও তৃণমূলে যোগ দিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। তাদের কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নিতে তৎপর ছিলেন। কিন্তু সরকারি দল ছাড় দেবে- এমন আশ্বাস না পেয়ে তাদের বেশির ভাগই এখন নীরব হয়ে গেছেন। কেউ কেউ নিজেরাই ঘোষণা দিয়েছেন যে, তারা এবারের নির্বাচনে যাবেন না।সূত্রমতে, যত বেশিসংখ্যক দলকে পারা যায় নির্বাচনে এনে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করার প্রচেষ্টা সরকারের রয়েছে। কিন্তু ছোট দলগুলোকে নির্বাচনে এনে এবং আসন সমঝোতার বিষয়টি সরকার স্পষ্ট করতে রাজি নয়। কারণ কারও কারও মতে, এতে দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে। যে কারণে প্রথম দিকে ছোট দলগুলোর যত আগ্রহ ছিল, পরের দিকে তা কমে যায়। এ খবর সবার কাছে রটে যাওয়ায় অনেকে পিছুটান দেন। সর্বশেষে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হওয়ার পর আসন সমঝোতার সম্ভাবনা আরও কমে গেছে।

আগে নানা গুঞ্জন থাকলেও সংবাদ সম্মেলন করে ইতোমধ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু এবং দলটির সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল ওহাব। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনএমের সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল ওহাব উপস্থিত থাকলেও পরিস্থিতি বুঝে এখন আবার অস্বীকার করে বলছেন, তিনি বিএনপি ছেড়ে যাবেন না। ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে বিএনএমের হয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন আবদুল ওয়াহাব। কিন্তু গত ২৭ নভেম্বর ওই আসনে মো. আব্দুল হাইকে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে বিএনপির মধ্যে কিছুটা সংশয় ও গুঞ্জন অব্যাহত রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত রবিবার ভোলা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে নূরন্নবী শাওনকে। ফলে কোনোভাবে নির্বাচনে বিএনএম থেকে বা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিলেও হাফিজকে ওই আসন শাওন ছেড়ে দেবেন বলে কেউ মনে করেন না। তবে হাফিজ গতকাল খবরের কাগজকে নিশ্চিত করেন যে, সংবাদ সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তব্যেই তিনি অটল রয়েছেন; অর্থাৎ আসন্ন নির্বাচনে তিনি যাচ্ছেন না।

তৃণমূল বিএনপির সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক তৈমূর আলম খন্দকারের আসনের বিষয়েও গতকাল পর্যন্ত কোনো আলোচনা বা সমঝোতা হয়নি। শমসের মবিনের কাক্সিক্ষত সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে। অন্যদিকে তৈমূর আলমের কাক্সিক্ষত নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক মন্ত্রী বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা গোলাম দস্তগীর গাজীকে। সাবেক এই মন্ত্রীর আসনে সমঝোতা বা ছাড়ের সম্ভাবনা কম বলেই মনে করা হচ্ছে।

তবে শমসের মবিন গতকাল খবরের কাগজকে জানান, তিনি নিজের শক্তিতে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী হিসেবেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। সমঝোতার বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনে হেরেও লাভ আছে। দৌড়ে কেউ না কেউ তো ফার্স্ট হবেই।

তৈমূর আলম খন্দকারও একই অবস্থানের কথা জানিয়ে বলেন, ‘কারও সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ নেই। আমি নির্বাচন করবই করব।’

বিএনপির দীর্ঘদিনের মিত্র কল্যাণ পার্টির সঙ্গেও আসন সমঝোতার বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম নির্বাচন করতে আগ্রহী চট্টগ্রাম-৫ আসন থেকে। কিন্তু ইতোমধ্যে সেখানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহম্মদ আবদুল সালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। জে. ইবরাহিম জানান, তৃণমূল থেকে তিনি মনোনয়নপত্র কিনেছেন, কিন্তু এখনো সেটা জমা দেননি।

নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে ইসলামপন্থি কয়েকটি দল দোটানায় থাকলেও ২৯৮ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণার পর গতকালই সমমনা চারটি ইসলামি দল বৈঠক করে নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই দলগুলো হলো বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও বাংলাদেশ নেজামে ইসলামী পার্টি। এর মধ্যে মাওলানা মুহাম্মদ ইসমাইল নূরপুরী ও মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস (প্রতীক রিকসা) এবং মাওলানা আবদুল বাছিত আজাদ ও ড. আহমদ আবদুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন খেলাফত মজলিস (প্রতীক দেয়াল ঘড়ি) গত রবিবার পর্যন্ত নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নে দোটানায় ছিল বলে জানা যায়।

একটি সূত্রের দাবি, এদের কারও কারও সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের যোগাযোগ ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়েছিল। কিন্তু পরিস্থিতি বুঝে গতকাল তারা একযোগে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

জমিয়তে উলামায়ে ইসলামীর সহসভাপতি আবদুর রব ইউসুফী গতকাল দলগুলোর এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘কারও সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল কি না আমার জানা নেই। তবে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর সমঝোতার আর সুযোগ আছে বলে মনে হয় না।’ তার মতে, আসন শূন্য থাকলে বোঝা যেত সমঝোতার সুযোগ রাখা হয়েছে।

বিএনএমের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর ফরিদপুর-১ আসন থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন। তবে ওই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হয়েছে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমানকে। শাহ জাফর বলেন, ‘নির্বাচনে সমঝোতা হবে কি না জানি না।’

দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. আবদুর রহমান বরগুনা-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে আগ্রহী ছিলেন। ওই আসনে ইতোমধ্যে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সংরক্ষিত আসনের আওয়ামী লীগের এমপি সুলতানা নাদিরাকে। ড. আবদুর রহমান জানান, আসন সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা হয়নি এবং হওয়ার প্রয়োজনও নেই। তিনি বলেন, মানুষ যাকে ভোট দেবে, তিনিই এমপি নির্বাচিত হবেন।

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে বিরোধ তৈরি হয়েছে ড. কামাল হোসেনের সমর্থিত গণফোরামের মধ্যে। এই দলটির একজন নেতা গোপনে নির্বাচন কমিশনে গেলে অন্য নেতারা এতে ক্ষুব্ধ হন। তবে আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে খবরের কাগজকে জানিয়েছেন দলটির সাবেক এমপি মোকাব্বির খান। অবশ্য মোকাব্বির খানের কাক্সিক্ষত সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে শফিকুর রহমানকে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়