৩০ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ - ১৩ জুন, ২০২৫ - 13 June, 2025

মিঠাপুকুরে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শিশুকে হত্যা

1 month ago
99


অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর : প্রকাশ্যে বিচারের দাবিতে পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ, আটক-১

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে আরফিনা মনি নামের ৮ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণ চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে ধর্ষক ফজলু মিয়া(৪৫)। পরে ঘটনা ধামা চাপা দিতে শিশুটির লাশ বালু চাপা দিয়ে রেখে দেয়। এঘটনায়  বিক্ষুদ্ধ জনতা ধর্ষকের বাড়িঘর ভাংচুর ও গাছপালা কেটে ফেলে। খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হলে উত্তেজিত জনতা অভিযুক্তকে প্রকাশ্যে বিচারের দেয়ার দাবিতে তাদেও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অতিরিক্ত পুলিশ, সিআইডি, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী গিয়ে তাদের উদ্ধার করেন।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, ঘটনার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় জনতা অভিযুক্ত ফজলু মিয়া (৪৫)কে আটক করে। খবর পেয়ে পুলিশে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফজুল মিয়াকে তাদের নিয়ন্ত্রনে নেয়। পরে নিহত শিশুটির লাশ ময়না তদন্তের জন্য পুলিশ নিতে চাইলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। তারা অভিযুক্ত ফজলু মিয়াকে উত্তেজিত জনতার হাতে প্রকাশ্যে বিচারের দাবিতে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানায়। এরই এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের দাবিতে অনড় থেকে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ সদস্যদের ঘেরাও করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে বাইরে চলে গেলে সেখানে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে অভিযুক্ত ফজলু মিয়ার বিচারের আশ্বাস দিয়ে তাকে আটক করে ও পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। গতকাল বোরবার বেলা আড়াই টার দিকে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের বুজরুক সন্তোষপুর শ্রীপুর এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, রোববার মিঠাপুকুর উপজেলার বুজরুক সন্তোষপুর শ্রীপুর এলাকার আরিফুর রহমানের ৮ বছরের শিশু কন্যা। সে প্রতিবেশী  মৃত নেছার উদ্দীনের ছেলে ফজলু মিয়ার বাড়ির পাশের একটি লিচু গাছের নীচে লিচু কুড়াচ্ছিল। এসময় ফজলু মিয়া আরফিনা বেগমের লিচু কুড়ানো দেখতে পেয়ে তার বাড়িতে অনেক গুলো লিচু আছে বলে প্রলোভন দেখিয়ে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পরে শিশুটিকে জোড় করে ধর্ষণ করার চেষ্টা করে। এ সময় শিশুটি বাঁধা দিলে ভারী কিছু দিয়ে তার মাথায় আঘাত ও শাস¦রোধ করে তাকে হত্যা করে। পরে লাশ বাড়ির বাইরে রাখা বালুর নিচে লুকিয়ে রেখে ধর্ষক ফজলু মিয়া (৪৫) পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা বালুর নীচে রাখা লাশের অংশ বিশেষ দেখতে পেয়ে তাকে  আটক করে পুলিশে খবর দেয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ধর্ষক ফজলু মিয়ার বাড়িঘর ভাংচুরসহ গাছপালা কেটে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালায়। খবর পেয়ে মিঠাপুকুর থানা পুলিশ ফজুল মিয়াকে আটক করে এবং বিক্ষুব্ধ জনতাকে ধ্বংসাত্মক কাজ বিরত থাকার আহ্বান জানান। এতে তারা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় শিশুটির লাশ নিতে পুলিশকে বাধা দিয়ে ধর্ষক ফজলুর প্রকাশ্যে বিচারের বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে তুলে দেয়ার দাবিতে থানা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে জেলা সদর থেকে অতিরিক্ত পুলিশ, র‌্যাব ও সেনাবাহিনী গিয়ে তাদের উদ্ধার করে।

দীর্ঘ সময় ধরে পুলিশ অবরুদ্ধ থাকার খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মাঠে নামে জেলা পুলিশ প্রশাসন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সেনাবাহিনী, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-সহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় চার ঘণ্টা পর শিশুটির লাশ ও আটক ধর্ষক ফজলু মিয়াকে থানায় নিয়ে আসা হয়।

এই ঘটনায় পুরো ওই এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয়রা অভিযুক্ত ফজলু মিয়ার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। পুলিশ পরিস্থিতি শান্ত রাখার চেষ্টা করছে এবং ঘটনার তদন্ত অব্যাহত রেখেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন বলেন, প্রাথমিক আলামতে দেখা গেছে শিশুটিকে ধর্ষনের চেষ্টা করা হয়েছে। শিশুটি এতে বাধা দেয়ায় তাকে ভারী কোন বস্তু দিয়ে মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। দিনের আলো না থাকায় আইনের বিধান অনুযায়ী রোববার শিশুটির লাশের ময়না তদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। সোমবার সকালে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত ও ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে। তার পর রিপোর্ট পাওয়া গেলে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা যাবে। বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা শিশুটির লাশ আটক রেখে অভিযুক্ত ধর্ষক ফজলু মিয়াকে প্রকাশ্যে বিচারের জন্য তাদের হাতে তুলে দেয়ার দাবি জানায়। এই দাবিতে তারা পুলিশ সদস্যকে ঘেরাও করে রাখে। পরে তাদের উদ্ধার করে আনা হয়।  

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth