৩ কার্তিক, ১৪৩২ - ১৮ অক্টোবর, ২০২৫ - 18 October, 2025

‎হুইলচেয়ারে অভিনয় করে জামিন চাইলো আসামি, সিসিটিভিতে ধরা পড়লো প্রতারণা

20 hours ago
27


নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ঘটেছে এক বিরল ও আলোচিত ঘটনা। অস্ত্র মামলার আসামি আনোয়ার হোসেন বাবু (৬৫) আদালতে হুইলচেয়ারে বসে অসুস্থতার ভান করে জামিন প্রার্থনা করেন। কিন্তু আদালতের সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে, তিনি আসলে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন এবং শুনানির আগে হেঁটে উপরের তলায় আদালত কক্ষে প্রবেশ করেন।বিচারক বিষয়টি জানতে পেরে প্রতারণার আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগে তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এই ঘটনাটি আদালতপাড়ায় ও আইনজীবী মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।বৃহস্পতিবার ১৬ অক্টোবর দুপুরে রংপুরের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এ ঘটনা ঘটে।বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির জামিন শুনানি শেষে বলেন,আসামি ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থতার ভান করে আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। এটি প্রতারণা।তিনি আরও উল্লেখ করেন, আদালত এমন প্রতারণা কোনোভাবেই বরদাস্ত করবে না। এরপর তিনি জামিন আবেদন খারিজ করে আসামিকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

রংপুর জেলা জজ আদালতের পুলিশ ইনচার্জ (কোর্ট ইন্সপেক্টর) আমিনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন,আসামি সুস্থ অবস্থায় হেঁটে আদালতে আসেন। কিন্তু কক্ষে প্রবেশের সময় হুইলচেয়ারে বসে অভিনয় করেন। বিচারক সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেন।মামলার তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ার হোসেন বাবু রংপুরের পীরগাছা থানায় দায়ের করা একটি অস্ত্র মামলার আসামি।তিনি রংপুর শহরের মুলাটোল এলাকার বাসিন্দা এবং মেসার্স মাল্টিট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি অস্ত্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক।বাবু আগে হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন নিয়েছিলেন। সেই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।নির্ধারিত সময় অনুযায়ী, গত ১২ অক্টোবর তিনি আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত ১৬ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করেন।

শুনানির দিনে তিনি আদালতে এসে অসুস্থতার ভান করে হুইলচেয়ারে বসেন  কিন্তু সেই নাটক শেষ পর্যন্ত ধরা পড়ে যায় সিসিটিভি ফুটেজে।

আদালতের সিসিটিভি মনিটরে দেখা যায় আনোয়ার হোসেন বাবু নিচতলা থেকে স্বাভাবিকভাবে হেঁটে উপরের তলায় উঠছেন। কিন্তু আদালত কক্ষে প্রবেশের আগে তিনি হুইলচেয়ারে বসে পড়েন, যেন তিনি মারাত্মক অসুস্থ।বিচারক বিষয়টি দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং বলেন,আদালতকে বিভ্রান্ত করার এই প্রচেষ্টা দৃষ্টান্তমূলকভাবে শাস্তিযোগ্য। আইন ও ন্যায়বিচারের সাথে এ ধরনের প্রতারণা সহ্য করা যায় না।পরবর্তীতে তিনি জামিন না দিয়ে সরাসরি আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।রংপুর জেলা জজ আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমিনুল ইসলাম বলেন,এখন আদালতের প্রতিটি অংশ সিসিটিভি মনিটরের আওতায় রয়েছে। কেউ প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আদালতকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।

তিনি আরও বলেন,বিচারক ঘটনাটি জানার পর সঙ্গে সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেন। এটি অন্যদের জন্যও সতর্কবার্তা।ঘটনাটি রংপুর আদালতপাড়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

একাধিক আইনজীবী জানিয়েছেন, এমন নাটকীয় প্রতারণা আদালতের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রচেষ্টা, যা কঠোরভাবে দমন করা উচিত।রংপুর জেলা আইনজীবী সমিতির এক সদস্য বলেন,এটি আদালতকে ঠকানোর পরিকল্পিত চেষ্টা। বিচারক যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে আদালতের মর্যাদা রক্ষা করেছেন।আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আধুনিক সিসিটিভি মনিটরিং ব্যবস্থা আদালতের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা বাড়িয়েছে।এই ঘটনা প্রমাণ করেছে  প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন প্রতারণা বা বিভ্রান্তির সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।এ ধরনের নাটক আদালতের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করে। তাই আদালতের এমন দ্রুত পদক্ষেপ প্রশংসনীয়।

ঘটনার ভিডিও ক্লিপ আদালত এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষও বিস্ময় প্রকাশ করে।

অনেকে বলেন,এমন দৃশ্য সিনেমায় দেখা যায়, বাস্তবে নয়। এক প্রবীণ আইনজীবী মুচকি হেসে বলেন,বাবু সাহেবের ‘অভিনয়’ ছিল অসাধারণ, কিন্তু স্ক্রিন টেস্টে ফেল করেছেন। রংপুর আদালতের এই ঘটনাটি প্রমাণ করেছে  এখন আইন ও বিচারব্যবস্থার চোখ ফাঁকি দেওয়া আর সহজ নয়। হুইলচেয়ারের অভিনয় থেকে শুরু করে প্রতারণা সবই ধরা পড়ে গেছে প্রযুক্তির নজরে।বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজিরের সিদ্ধান্ত আদালতের মর্যাদা ও আইনের প্রতি শ্রদ্ধা জাগিয়ে তুলেছে আবারও।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth