৬ বৈশাখ, ১৪৩১ - ১৯ এপ্রিল, ২০২৪ - 19 April, 2024
amader protidin

রংপুরে মামলাবাজদের কব্জায় সরকারের প্রায় ৪০ কোটি টাকার জমি

আমাদের প্রতিদিন
1 year ago
516


ইকোপার্ক স্থাপন প্রক্রিয়া বাতিল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রংপুর নগরীতে মামলাবাজদের কব্জায় বেদখলে সরকারের প্রায় ৪০ কোটি টাকার জমি। তা উদ্ধারে কোন অগ্রগতি নেই। ফলে রংপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক ইকোপার্ক স্থাপন প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। ফলে রংপুর নগরবাসীর জন্য প্রস্তাবিত বিনোদন ও পরিবেশ বান্ধব একটি প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়েছে। এতে সচেতন নগরবাসী ও বিনোদন প্রেমীরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রয়া ব্যক্ত করেছেন। স্থানীয়রা জমি উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে দাবি জানিয়েছেন।

          একাধিক পুকুর খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন

অনুসন্ধান করে সরকারি দপ্তরের নথিপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, নগরীর জুম্মাপাড়া মহল্লার বাসিন্দা তছলিম উদ্দিন। তিনি রাধাবল্লভ মৌজার সরকারের আর,এস খতিয়ান (০১) খাসভুক্ত ১৬৯৩ দাগের ৪৮ দশমিক ৪২ একর জমির মালিকানা দাবি করেন। সেখানে তিনি বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে বেশকিছু জমি বিক্রি করেছেন। একাধিক পুকুর খনন করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করেন। ওই জমিতে একটি সড়ক নির্মাণ করেন। পরে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের অর্থায়নে ও সহযোগিতায় নিজের নামে তছলিম উদ্দিন সড়ক নামকরণ করেন। যার উদ্বোধন করেন বিগত মেয়র ও সদ্য মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাসহ স্থানীয় কাউন্সিলরবৃন্দ। এনিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও  দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষে জমির মালিকানা দাবি করা হলে বিষয়টি ভূমি আপিল বোর্ড পর্যন্ত গড়ায়। এ নিয়ে ভূমি আপিল বোর্ডে চলামান রিভিউ মামলা(নং-৫-৯২/২০১৬) নিষ্পত্তি করে ভূমি আপিলবোর্ড পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করা হয় ৯.১০.২০১৮ সালে। ওই রায়ে জমির মালিকানা সরকারের বলে আদালত রায় ঘোষণা করেন।

        জমি উদ্ধারে জরুরি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি

পরে রংপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, ওই জমিতে নগরবাসীর বিনোদন উদ্যান ও পরিবেশ বান্ধব নগরী গড়ে তুলতে একটি ইকোপার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে তিনি ম্যাজিট্রেট ও সার্ভেয়ার নিয়োগ করে সরকারি জমি দখলে নেন এবং সেখানে লালপতাকা তুলে সীমানা নির্ধারণ করে সরকারি জমির মালিকানার নোটিশ বোর্ড ঝুলিয়ে দেন। এর কিছিুদিন পরেই রাতের অন্ধাকারে ওই সব সীমানা পিলার ও নোটিশ খুলে ফেলেন দখলকারীরা এমন অভিযোগ রয়েছে।

পরে দখলকারীর তছলিম উদ্দিন সরেজমিন পুনরায় জমির মালিকানা দাবি করে রংপুর জেলা জজ আদালত(১) এ পৃথক একটি মামলা ( অন্য-১২০/১৮) দায়ের করেন। শুধু তাই নয় আপিল বোর্ডের পূর্ণাঙ্গ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে একটি রীট পিটিশন (৭৪২১/২০২২) দায়েরসহ ওই জমির ওপর ‘স্থিতি অবস্থা’ জারি আবেদন করেন। আদালত তার আবেদন মঞ্জুর করে বাদীর আবেদনের বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে নোটিশ জারি করে। গত ১৭ তারিখ ওই নোটিশ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পৌঁছেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ফলে একই জমির মালিকানা নিয়ে একাধিক মামলার বেড়াজালে অটকা পড়েছে রংপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রংপুর নগরীর ইকোপার্ক প্রকল্প।

গত সোমবার রংপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এর কাছে ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই সীমানা পিলার, লাল পতাকা ও নোটিশ বোর্ডের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। রংপুর নগরীর শালবন তহশীল অফিসে সংরক্ষিত এই জমির নথিপত্রে এ সব তথ্যেও সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে রংপুর জেলা জজ আদালতের আইনজীবী রফিক হাসনাইন বলেন, রংপুর নগরীতে শিশুদের বিনোদনের জন্য সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক শিশুদের ও বড়দের জন্য কোন বিনোদন পার্ক নেই। খেলাধূলার নির্ধারিত জায়গা নেই। সেখানে সরকারি জমিতে সরকারের উদ্যোগে একটি ইকোপার্ক স্থাপন করা হলে রংপুরবাসীর জন্য একটি বিনোদনের জায়গা হতো। শুধু তাই নয় পরিবেশ বান্ধব একটি শহর গড়ে তুলতে এই পার্কের ভালো ভূমিকা রাখবে। একই রকম মন্তব্য করেছেন, সমাজকর্মী ও বিশিষ্ট অভিনেতা বিপ্লব প্রসাদ। তিনিও রংপুরে ওই জমিতে ইকোপার্ক স্থাপনের দাবি জানান।

এ বিষয়ে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(রাজস্ব) এ.ডব্লিউ.এম.আবু রায়হান শাহ বলেন, বিষয়টি শুনেছেন। নথিপত্র দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকারি জমি উদ্ধারে সব রকমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

 

 

সর্বশেষ

জনপ্রিয়