১২ শ্রাবণ, ১৪৩১ - ২৭ জুলাই, ২০২৪ - 27 July, 2024
amader protidin

বিরলে পথসভায় একে অপরের বিরুদ্ধাচারণ করে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর বক্তব্য চলছে

আমাদের প্রতিদিন
2 months ago
91


আতিউর রহমান, বিরল (দিনাজপুর):

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিরলে একে অপরের বিরুদ্ধাচারণ করে পথসভা সমূহে বক্তব্য চলছে। একে অপরের বিরুদ্ধাচারণ করে বক্তব্য প্রদান করলেও রিটার্নিং অফিসারের নিকট অভিযোগ করেননি কেউই। উস্কানীমূলক বক্তব্যে যে কোন মুহুর্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা প্রকাশ করছেন সাধারণ ভোটাররা। বক্তব্যের চানক্যে হাট—বাজারের দোকানগুলোতে চলছে দিনভর মুখরোচক আলোচনা। কোন প্রার্থী কিভাবে অর্থ, বিত্ত, সম্পদের মালিক হয়েছেন আর কিভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দাপটের সাথে চলছেন এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিচার—বিশ্লেষণ। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে উঠা নেতাদের নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন! এ উপজেলায় ২১ মে ২০২৪ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

শুক্রবার রাতে রাণীপুকুর ইউনিয়নের বহবলদিঘী বাজারে পথসভায় বিরল উপজেলা পরিষদের আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, বক্তব্য কি দিবো আমি তো এলাকারই লোক। আপনারা তো আমাকে সবাই চেনেন। তারপরও কিছু বক্তব্য খন্ডনের জন্য এলাকায় এসেছি। চালইন তো চিনেন। সুইকে বলে তোর পিছনে তো ছিদ্র (ফুটা)। আসলে চালইনের টোটালে যে পিছনে ছিদ্র (ফুটা) ওইটা কিন্তু ওর খেয়াল নাই। কালকে এখানে এসে অনেকে পাগলের প্রলাপ বকছে। ঢাকায় বাড়ী আছে, বাড়ী নাই। ঢাকায় জায়গা আছে। জায়গা আছে বলতে পয়েন্ট ৮ শতক ১৩৫ জন মিলে সাড়ে বারো লাখ টাকা আমার পরেছিল। জায়গাটা কেনা যদি কোনদিন ফ্লাট করা হয় তাহলে আর কি! আমার মনে হয় সাড়ে বারো লাখ টাকা এখন অনেক ভ্যানওয়ালারও আছে।

এলাকার যারা বিদ্যুৎ লাইন নিছে, গোটা বিরলবাসী কেউ বলতে পারে আমি চারআনা পয়সা কারো কাছে নিছি। কোন হয়রানি কাউকে করছি কেউ বলতে পারবে না। হ্যঁা আমার দোকান আছে, এটা বলেছি যে মালতো (ইলেক্ট্রনিক সরঞ্জাম) নিবু, মোর দোকান থাকি নিস। এটা একজন ব্যবসায়ী হিসেবে বলতেই পারি।

ভ্রাম্যমান আদালত এর কথা, আমার মুড়ির মিল ছিল। একটা প্রতিষ্ঠান আমি করেছিলাম। ট্রেড লাইসেন্স করেছিলাম। বিভিন্ন ধরনের মালামাল এর জন্য কাগজপত্র প্রসেসিংয়ে ছিল। কাগজপত্র তখন পুরোপুরী তৈরী হয়নি। এরাই চক্রান্ত করে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করেছিল ২ লাখ টাকা। এটা তো যে কোন প্রতিষ্ঠানে ভ্রাম্যমান আদালত করেই থাকে। কি করে না—করে। এটাতে কি হয়েছে। আরে এটাতেই যদি এই অবস্থা, আর তুমি (রমাকান্ত রায়) যে কয়দিন পরে জেলে ঢুকবা, এইটা খেয়াল রাখো। আমার জবাব আমি কিন্তু দিয়ে দিলাম। ওর (রমাকান্ত রায়) হলফনামা আমার কাছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রমামান্ত রায়কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ও যে এখন শতকোটি টাকার মালিক এটার জবাব কোথা থেকে দিবে। আমার জবাব আমি দিয়ে দিলাম। দুদক আর যে কেউ আসুক সব জায়গায় আমার একই জবাব। আর ওর জবাব ওয় কোথা থেকে দিবে? ওর জবাব কিন্তু নাই। ১৫ বছর ধরে হালজায় স্কুলে ক্লাস করে? হালজায় এর মানুষ এখানে আছে। কেউ বলতে পারবে ও কয়দিন স্কুলে গেছে। ডিপিও সাহেব একদিন স্কুলে গেছে। স্কুলের ছাত্ররা তার স্যারকে চিনেনা। সবাই চিনে নেতা হিসেবে। স্কুলের ছাত্র যে ওকে চিনে না, ওয় কোন টিচার বলেন। ১৫ বছরে কেউ ওকে চোখে দেখেনি স্কুল করতে। স্কুলে যে ওয় যায় না আর বেতন তুলে এর জবাবদিহি ওকে করতে হবে।

আমি জানতাম বিরলে একটা বড় করে বাড়ী করছে। আজকে মনির কাছে শুনলাম ওর ৪ টা বাড়ী নাকি বিরলের পাইকপাড়াতে। এটা কিন্তু আমি জানতাম না। বিরলের সাব রেজিষ্ট্রী অফিস আর চিরিরবন্দরের সাব রেজিষ্ট্রী অফিসে নাকি প্রতি সপ্তাহে খালি ওর জমি রেজিষ্ট্রী হইতে আছে। ওইটা কিন্তু হলফনামায় দেয়নি। ওই জমি সব বাজেয়াপ্ত হবে।

আজকে কোন লোক কই আমাদের কাছে তো যায়না। আর উনার বাড়ীতে প্রতিদিন লাইন ধরে মানুষ খালি টাকা নিতে যাচ্ছে। সবাইকে বলা হচ্ছে ভোটের পর, খালি ভোটটা হউক ভাই তারপরে দিবো। শতশত লোক! ছেতেরাতে গেছে ভোট চাইতে, হাত মিলাতে গেছে, সেখানে ৭ জন লোক বলেছে হামার যে টাকাটা নিছুলু টাকাটা দিয়া তারপর ভোট চাহিবা আসিবু। ওই বিলাইমারীতে একই অবস্থা, সব জায়গাতে। ওই গরুরগ্রাম এর ওইপাশে হাবাতিয়া ডালিম স্যার নামে একজন স্যার আছে আমাকে উনার বাবা বলছে তুই বসিনা বাবা। তোক বেলে বসাই দিবা চাহেছে। আমাদেরকে সর্বশান্ত করি দিছে। ওয় হামার জাতির কলঙ্ক। এরকম ধরণের শতশত মানুষের হায় নিশ্বাস। মানুষের হায় নিশ্বাস বড় জিনিস। এরকম শত শত লোককে সে পঙ্গু করে দিয়েছে। শত শত লোককে সে পথে বসিয়ে দিয়েছে চাকুরী করে দেয়ার নাম করে। আল্লাহ পাক যদি মাফ করে তাও মানুষের হায়নিশ্বাস মাফ করবে না। কই একটা উদাহরণও তো আমাদের নাই। কেউ আমাদের তো বলেনা।

আজকে গছহাটা আশ্রমে গেছিলাম। তারাই কথাটা তুললো। একটা বিদ্যুতের পোল সরানোর জন্য ৬০ হাজার টাকা বেলে চাইছে। আমাকে বলেছে কই এক টাকাও লাগেনি। একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে যদি এরকম টাকা চাওয়া হয়, তাহলে বলেন।

বিজোড়া বাজারে একজন অবসরপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য পরিদর্শক নজরুল ভাই জিজ্ঞাসা করেছে, তুই এত টাকার মালিক কিভাবে হলু। আরে দেবোত্তর সম্পত্তি টম্পত্তি এইলা দিয়া হইছে। আরে নিজে আবার স্বীকার করেছে। তাহলে চিন্তা করে দেখেন, যে মন্দিরের টাকা মারে খায়, যে দেবোত্তর সম্পত্তির টাকা মারে খায়, তার সাথে জনগণ কতটুকু থাকবে।

আমি ১৮ বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছি। বিরল পৌরশহরে দলীয় কার্যালয়ের জায়গা ক্রয় করে মন্ত্রী মহোদয়ের সহযোগিতায় দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। প্রত্যেকটা ইউনিয়নে দলীয় কার্যালয় করা হয়েছে। কেউ বলতে পারবে কাউকে ঠকায় জায়গা নিয়েছি? আমরা উচিৎ মূল্য বুঝায় দিয়ে জমি ক্রয় করে দলীয় কার্যালয় করেছি।

মঙ্গলপুরে চাকুরী দেয়ার নাম করে মূল্যবান জমি নিয়ে আর চাকুরী দেয়ার নাম নাই। মানুষকে ঠকায় এভাবে কি সহ্য করবে উপরওয়ালা। মানুষকে এভাবে প্রতারণা করে কয়দিন। চিরদিন সবার সমান নাহি যায়। আজকে আমরা ক্ষমতায় আছি, দুইদিন পর নাও থাকতে পারি। কি তাই না। গণতন্ত্র তো। চিরদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে তা না। সেইটার জন্যও রাস্তা খুঁজি রাখিছে, হো ওইপাখেও বাড়ী করিছে। চিন্তা করে দেখেন। সেই জায়গায় সে যদি আসে। তার রাস্তা কিন্তু করিছে ওইপাখে। হামার তো কুনোঠে বাড়ী নাই কি করিমো হামরা। আমরা এখানেই থাকবো, আর সে কিন্তু ভাগি যাবে। এক বেটাক পাঠাইছে রাশিয়া, এক বেটাক ইন্ডিয়া। আজকে আবার বলে আওয়ামী লীগের কেউ না। কোন জীবনে রাজপথে ছিল। ৯০ এর আন্দোলন, যে কোন আন্দোলনে ছিল। ব্যাগ নিয়ে চামচামি করে নিয়ে বেড়াইছে। আজকে আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী আমি যদি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করতাম, সে কোন জীবনে হতে পারতো? আমার করুণায় সে, আমি ছেড়ে দিছি বলে সে হইতে পারছে। আমি নির্বাচিত সেক্রেটারী, আমি নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে সেক্রেটারী নির্বাচিত হয়েছি। কারো দোহাই দিয়ে আমি আসি নাই। আর সে তো আমি ছেড়ে দিছি বলে ওই জায়গায়টায় এসেছে। এরপরে কিভাবে আসে, দেখা যাবে। বিরলের লোকজন শান্তিপ্রিয়। আমরা শুনেছিলাম, ওইদিকের লোকজন বেলে লুটপাট করে, খারাপ লোক। আজকে সে মৃত বাপকে ভূয়া একটা মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়েছে। চিন্তা করে দেখেন, উনার বাপ কি মুক্তিযোদ্ধা ছিল, আজকে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সেই কথা বলবে। অন্যায়ের একটা সীমা আছে। এত ভুয়া এগুলো জিনিস কি, সব বের হবে। মানুষ মাত্রই ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। আমরা সুই যদি হই, তুমি তো চালইন। আমি ৪০ বছর ধরে রাজনীতি করেছি। ক্ষমতায় থেকেছি। আমারও তো ভুল ত্রুটি থাকতে পারে। আজকে কোন মানুষকে আমি কষ্ট দিয়েছি কেউ বলতে পারে। কোন মানুষকে পথে বসিয়েছি। এমন কোন মানুষ আছে যে আমার অফিসে কিংবা বাসায় গিয়ে অসম্মান হয়েছে। আগে শুনছিলাম ডাক্তারের কাছে গিয়ে ভিজিট লাগে, এখন শুনছি তার সাক্ষাৎ করতে গেলে একটা বেনসন এর প্যাকেট লাগে। রাণীদিঘীতে নাকি বলেছে ঈদগাহ মাঠে এক কোটি টাকা দিবে। বাটপারীর একটা সীমা আছে। গোটা উপজেলা পরিষদে ১ কোটি টাকা বছরে বাজেট আসে। সেখান থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে দেয়ার পরে উপজেলায় আর কত থাকে? যেখানেই যাচ্ছে, সেখানেই এক মসজিদে বলছে এক লাখ টাকা দিয়ে দিলাম। এটাও বাকি। মানুষের একটা সীমা আছে। সে ভদ্রতাকে দূর্বলভাবে। প্রচন্ড ভদ্রতা দেখিয়েছি পাঁচ বছর। আর কোন অনিয়ম দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ১৫ বছর ধরে স্কুল করছে না, এর জবাবদিহি তাকে করতে করতে হবে। এত টাকার উৎস কোথায়, এটা বের করতে হবে। টাকার খনি, আমার নুন আন্তে পন্তা ফুরায়। আমি একটা কর্মীকে চা খাওয়াইতে পারছিনা। একটা কর্মীকে মটর সাইকেলের তেল খরচ দিতে পারছি না। আপনারা নিজ খরচে আমার পথসভায় আজকে এসেছেন। নিজের বিবেকে লাগে এই লোকগুলার ঋণ আমি কিভাবে শোধ করবো। এতদিন রাজনীতি করে এই লোকগুলোকে আমি কিছু দিতে পারছি না, আমার বুকে কষ্ট হয়। ২—৩ শ মটর সাইকেল এসেছে, আমি কাউকে টাকা দিতো পারছি—না। এই লোকগুলোর ঋণ আমি কথা থেকে শোধ করবো। আজকে গোটা বিরল জেগেছে। অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

অপরদিকে বিরল উপজেলা পরিষদের মটর সাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমাকান্ত রায় ঢেরাপাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আয়োজিত পথসভায় বলেন, আমার উপজেলা নির্বাচন করার মত ক্ষমতা নাই। যদি না আমার সাথে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ সাথে থাকতেন। উনারা আমার সাথে আছেন বলেই আমি নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছি। সৃষ্টিকর্তা যাকে মনে করবেন, তাকেই জয়ী করবেন। সৃষ্টিকর্তা যদি না চান, কেউ জীততেও পারবো না, কেউ কাউকে হারাতেও পারবে না। কিন্তু আমার পরিবারকে আমাকে ঠিক রাখতে হবে। কেউ মন খারাপ করে দূরে থাকবেন। আসুন এক পরিবারের মধ্যে থাকি। আমার পরিবারের কথা চিন্তা করে আমি আহ্বান জানাবো আসুন একসাথে জীতবো অথবা একসাথে পরাজয় বরণ করবো।

তিনি আরো বলেন, রাজনীতি করতে এসে অনেক ঘাত প্রতিঘাত মোকাবিলা করেছি। শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত ঐ অপশক্তির ভয়ে চোখ রাঙ্গানিতে রমাকান্ত রায় এদেশের মাটি ছাড়বে না। তোমরা যাবা, আমি যাবো না। আমি আছি, আমি থাকবো। হ্যাঁ খুবই যদি রাগ উঠে যায়, খুন করতে পারো। আমার আপত্তি নাই। রাতের অন্ধকারে খুন—খারাবী করলে কোন কথা আছে, না নাই। তাই আমি আমার রাজনৈতিক জীবনের ইতিহাস বলতে চাই না, বলতে গেলে কান্না চলে আসে।

রমাকান্ত রায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই বাংলাদেশে আমার জন্ম, আমি কেন ইন্ডিয়া যাবো। ২১ তারিখে দেখা হবে কে ইন্ডিয়া যাবে? খেলা হবে। একসময় হরিণ বিড়ি সবাই খাইতো। আমিও খাইতাম। এখন কেউ খায় না। আমিও খাইনি। এটা বক্তব্যের মধ্যে আনার বিষয় হলো। আমার ঘাড়ে ব্যাগ থাকতো। লাল ব্যাগ ধরে বেলে ঘুরি বেড়াইতাম। আমি নেতা ছিলাম। ব্যাগ রাখতাম। সেই ব্যাগ এখনও আমার আছে। সেটি আমার পুরুষ্কার। আমি স্¦যত্নে রেখেছি। আমি সেই লালব্যাগ থেকে আজকে আমি আওয়ামী লীগেরমত একটি বৃহৎ সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি, এমনি এমনি হই নাই। কর্মীদের কারণে হয়েছি। কোটি কোটি কোটি কোটি টাকার মালিক যদি আমি ৪ বছরে হই, তাহলে তুমি কত বছর ছিলে আর কত কোটি টাকার মালিক হয়েছো? তাহলে তুমি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি কোটি টাকার মালিক? চার বছরে যদি এতো হয়, তাহলে ২০ বছরে কত? ৩ নম্বর ইউনিয়নেই তুমি তিন তেরং ৩৯ লাখ টাকা কামাই করেছো এটা আমার প্রয়াত বন্ধু মনজুরুল ইসলাম চৌধুরী ভাষ্য মতে কথা। ৪ টি প্রতিষ্ঠানে চার তেরং ৫২ লক্ষ টাকা। বিদ্যুৎ এর কামাই কত টাকা করেছো? ওর (এ কে এম মোস্তাফিজুর) নামের শেষ নাই। কখনও বলি কারেন্ট বাবু আবার কখনও বলি ৪২০ বাবু।

একই পথসভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরমেয়র আলহাজ¦ সবুজার সিদ্দিক সাগর বলেন, ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে রমাকান্ত রায় কখনও আওয়ামী লীগের নীতি ও আদর্শ থেকে বিচ্যুত হোননি। এই ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা রেখে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মেনে চলেছেন। আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভা করে তাকে সমর্থন জানিয়েছি। আজকে ৩ নং ধামইর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ ঢেরাপাটিয়া স্কুলে পথসভার আয়োজন করেছে। রমাকান্ত ৪০ বছর শুধু রাজনীতি করেই গেছেন। কখনও কোন নির্বাচনে প্রার্থী হোননি। তিনি গতবার উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে মনোনয়ন দেননি। মনোনয়ন পেয়েছিলেন এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি সেই নির্বাচনেও দলীয় মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছেন এবং বিজয়ী করিয়েছেন। তিনি কখনও বিরোধীতা করেননি। তিনি আওয়ামী লীগের প্রতি ও নৌকার প্রতি অনুগত। আর আজকে সেই জন্য আমরা তাকে সমর্থন দিয়েছি। আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী যে এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু তাকে আমরা কেন সমর্থন দেইনি। ২০১৯ সালে যখন আমাদের উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয় তখন এমপি মহোদয় বলেছিলেন দীর্ঘ ১৬ বছর যাবৎ এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার রমাকান্ত রায়কে আমি দায়িত্ব দিলাম সাধারণ সম্পাদকের আর এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু উপজেলা চেয়ারম্যান আমার ছোট ভাই, আমি তার হাত ধরে বিরল উপজেলার উন্নয়ন কাজ করবো। কিন্তু আমরা কি দেখলাম তিনি আর কোনদিন উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে পা দেননি। তিনি ১৫ আগস্টের কর্মসূচীতে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ৪ বছরে কোনদিন শ্রদ্ধা নিবেদন করলেন না। তিনি চলে গেলেন ঢাকায় তার ভাই সচিব ছিলেন, সেখানে গিয়ে তিনি কেন্দ্রে খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা শুরু করলেন।

তিনি এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমানকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমরা কি ভুলে গেছি, বিদেশ পাঠানোর নামে টাকা আত্মসাৎ করার কারণে রমনা থানায় মামলা করেছিল ভূক্তভোগীরা, আর তৎকালীন মন্ত্রী মহোদয়ের বাড়ীতে পুলিশ গিয়ে তোমাকে খোঁজ করেছিল, আর তুমি সেদিন পালিয়েছিলে। পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ২ বিঘা জমি তুমি পেয়েছো। বিরল বাজারের মুনসেফ মাষ্টারের জামাইয়ের ৩ বিঘা জমি ও সেই জমি বিক্রির টাকায় মামলা চালিয়েছো। জেলের হাত থেকে বেঁচে গেছো আওয়ামী লীগ করার কারণে। আর এখন তুমি এত টাকার মালিক কোথা থেকে? আমরা সেদিন কথা বলিনি আওয়ামী লীগের দুর্নাম হবে বলে। কিন্তু তুমি যখন ভেজাল জুস তৈরী করো। ভেজাল সরিষার তেল তৈরী করো। আমরা সেগুলো কিনে খাই। র‌্যাব এর অভিযানে আমরা জানতে পারি তুমি কানা হাফেজ মোড়ে এই ভেজাল কারবার করো। র‌্যাব যখন তোমাকে হাতকড়া পরিয়েছিলো, তৎকালীণ এমপি যখন জানতে পারলো, তখন আওয়ামী লীগের দুর্নাম হবে বলে তৎকালীন জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করে তোমাকে জেল থেকে বাঁচানো হয়েছিল, আমরা কি সেগুলো ভুলে গেছি। সেদিন তোমাকে ২ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল, তুমি জরিমানা দিয়েছিলে, আর তোমার ম্যানেজারকে ৬ মাসের জেল দিয়েছিল ভ্রাম্যমান আদালত। তোমার ব্যবসাটা হচ্ছে মানুষ ঠকানো। ৯৬ সালে আদম ব্যাপারী করতে গিয়ে এই এলাকার ১৭ জন মানুষকে ঠকিয়েছিলে আর ২০১০ সালে এসে এই এলাকার শিশুদের কাছে তুমি ভেজাল জুস বাজারজাত করছিলে।

আমরা কি ভুলে গেছি, ২০১৭—১৮ সালে বিরল উপজেলার ৩৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ্য প্রহরী নিয়োগ করা হয়েছিল। এই শুকদেবপুর স্কুলে একটি নিয়োগ হয়েছিল। এখানে শুকদেবপুরের মানুষ আছে, তারা বলবে কত টাকা তুমি নিয়েছিলে। ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়েছিলে। তাহলে ৩৯ টি স্কুলে কত টাকা তুমি নিয়েছিলে?

আমরা কি ভুলে গেছি, আমাদের নেতা ইছাহাক আলী সরকার ২০১৪ সালে যখন মারা যান। তখন মন্ত্রী মহোদয় উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আমরা ইছাহাক আলী সরকার এর প্রতি শ্রদ্ধা রেখে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করবো না। আমরা মনে করবো ইছাহাক আলী সরকার মৃত্যুবরণ করে নাই, তিনি চিকিৎসায় আছেন, আমাদের নিকট জীবীত আছেন। তখন তুমি একাই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছো।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌছে দিবো ঘোষণা দিলো। তখন এই বিরল উপজেলার ৬০ হাজার মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ পৌছানো হয়। তখন লিলির মোড়ে তোমার ওই ইলেক্ট্রিক তার ও মালামালের দোকানের কথা আমরা কি ভুলে গেছি? পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির বিরল এলাকার ওয়ারিং এর শ্রমিকরা যখন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কক্ষে এমপি মহোদয়কে বলেছিল আমরা আপনার সাধারণ সম্পাদকের দোকান থেকে মালামাল না নিলে কোন কাজ করতে পারছি না। আমরা এখন না খেয়ে আছি। এমপি মহোদয় যখন বললো কেন, তখন শ্রমিকরা বললো যেই মালামাল আমরা ১৬০০ টাকায় কিনি উনার দোকান থেকে সেই মালামাল ২২০০ টাকায় কিনতে হয়। উনার দোকানের মালামাল না কিনলে সেই লাইন উদ্বোধন হয় না। একটি মিটারে ৫ থেকে ৬ শত টাকা বেশি নেয়া হয়। তাহলে তখন তুমি ৬০ হাজার মিটারের কত টাকা আমাদের নিকট হতে নিয়েছো। তখন তুমি লিলির মোড়ে যে প্রেসটি দিয়েছিলে, সেই প্রেসটি বসিয়েছিলে ৪০ লক্ষ টাকায় আর দোকানের সিকিউরিটি দিয়েছিলে ৩০ লক্ষ টাকা। কোথা থেকে আসে এত টাকা? তোমার ঢাকায় ফ্লাট আর ঢাকা উত্তর সিটি কপোর্রেশনের মার্কেটে সারি সারি দোকান কোথা থেকে হলো? অভিনয় করো আমার কিছু নাই, আমার জনগণই সব। এই জনগণের অর্থগুলো কোথায় গেছে? এই টাকাগুলো কোথায় গেলো। এই টাকাগুলো দিয়ে তুমি ঢাকায় আলীসান জীবন যাপন করো। এই যে ৫ বছর গেলো। এই ৫ বছরে কোনদিন এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু ধুকুরঝাড়ীতে এসেছে? কারো বিপদে পাশে দাড়িয়েছে। সে অফিসারের মত একটি এসি গাড়ী নিয়ে আলীসান জীবন যাপন করছে। জনগণের পাশে কখনও দাড়ায়নি।

সাধারণ ভোটারদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিরলকে উন্নয়নে শীর্ষে পৌঁছাতে মটর সাইকেল প্রতীকে রমাকান্ত রায়কে ২১ মে ২০২৪ ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করতে হবে। তাহলে আমাদের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বিকশিত হবে।

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগের ৩ জন চেয়ারম্যান পদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ১ জন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রাণীপুকুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আজম প্রতীক বরাদ্দের পর হতে কোন প্রচার প্রচারণায় অংশ নেননি। তবে অপর ২ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আনারস প্রতীকের জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু এবং মটর সাইকেল প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রমাকান্ত রায় এক অপরের বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদানসহ ভোট কামনা করে চলেছেন। এছাড়াও অপর একজন চেয়ারম্যান পদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি এ্যাড. সূধীর চন্দ্র শীল তাঁর দোয়াত কলম প্রতীকে ভোট কামনা করে প্রচার—প্রচারণা করে চলছেন। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন এর মধ্যে মোঃ তোফাজ্জল হোসেন (মাইক), মোঃ আমিনুল ইসলাম (টিউবওয়েল), মোঃ আব্দুল হালিম (তালা) এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফিরোজা বেগম সোনা (পদ্মফুল), সুলতানা ইয়াসমিন রুমুন (ফুটবল) ও মোছাঃ তছলিমা বেগম (হাঁস) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচার—প্রচারনায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। দুপুর হলেই মাইকিংয়ে সরগরম থাকছে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ। এছাড়াও চলছে প্রার্থীদের পৃথক পৃথক পথসভা, উঠান বৈঠক, মটর সাইকেল শো—ডাউনসহ বিভিন্ন প্রচারণা।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়