মিঠাপুকুরে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ

মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি:
রংপুরের মিঠাপুকুরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পুত্রবধূ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হাতে এক বয়োবৃদ্ধকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। নিহত বৃদ্ধের ছেলেদের দাবি তার ভাইয়ের বউ ফিল্মি স্টাইলে সুপরিকল্পিত ভাবে বৃদ্ধ বাবাকে হত্যা করেছেন। নিহত বৃদ্ধের পায়ে ও মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
শুক্রবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল আনুমানিক ১০ টার দিকে এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে। ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে কাজ করছে। লাশ মিঠাপুকুর থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছে।
নিহত বৃদ্ধের নাম মমতাজ উদ্দিন (৯০)। তিনি উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের রূপসী (বড়বাড়ী) গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত পুত্রবধূ কোহিনূর আক্তার (৩৮) একই গ্রামের আজিজুর রহমানের স্ত্রী এবং নিহত মমতাজ উদ্দিনের ছেলের বউ।
এলাকাবাসী জানান, নিহত বৃদ্ধ মমতাজ উদ্দিনের ৩ ছেলে। তারা হলেন আশরাফুল ইসলাম, আনিছুর রহমান ও আজিজুল ইসলাম। এরমধ্যে আজিজুল ঢাকায় থাকেন। আর তার স্ত্রী কোহিনূর বেগম গ্রামের বাড়িতে বসবাস করেন। গত ৭/৮ বছর তাদের মধ্যে ধরে নিহত বৃদ্ধের জমিজমা ও পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। অভিযুক্ত কোহিনূর এ পর্যন্ত মিঠাপুকুর থানা ও আদালতে প্রায় ১৮ টি মামলা করেন।
ঘটনার দিন শুক্রবার পিতা মমতাজ উদ্দিন সহ বড় ছেলে আশরাফুল ইসলাম রংপুর চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শহরের পায়রাচত্বর এলাকায় তারা অটো থেকে নামা মাত্রই পিছন দিক থেকে দুটি মোটরসাইকেলে হেলমেট পরা চারজন লোক এসে বলেন 'এই ধর এরাই এরাই' বলে মারপিট শুরু করেন। এসময় বৃদ্ধ মমতাজকে বেধড়ক মারপিট ও ছুরিকাঘাত করলে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েন। ছেলে আশরাফুল ইসলামও আহত হন। মাত্র ৭ থেকে ৮ মিনিটের কিলিং মিশন শেষে সেখান থেকে সটকে পড়েন অভিযুক্তরা। তবে ঘটনার সময় পুত্রবধু কোহিনূর বেগম ঘটনাস্থলে ছিলেন বলে দাবি নিহত বৃদ্ধের ছেলের। পরে ঘটনাটি জানাজানি হলে লোকজন তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসেন। তার কিছুক্ষণ পরেই রংপুর হতে চলে আসেন কোহিনূর বেগম। এতে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তাকে অবরুদ্ধ করে মিঠাপুকুর থানা পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত শুরু করেন পুলিশ। স্থানীয়রা বলছেন, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদঘাটনে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইল ট্রাকিং ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা গেলে, বৃদ্ধের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ ও হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, কোহিনূর ভয়ংকর প্রকৃতির মানুষ। সে এলাকায় মামলাবাজ নামে পরিচিত। তার শশুর নিহত মমতাজ উদ্দিন খুব ভালো মানুষ ছিলেন। ওই বউ (কহিনুর) বাড়িতে আসার পর থেকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় পরিবারটি ধ্বংস হয়ে গেছে। জমি লিখে না দেওয়ায় শেষ পর্যন্ত প্রাণটাও হারালেন বৃদ্ধ। ওই মহিলা এতোই খারাপ যে, তার বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেই মামলায় ফাঁসিয়ে দেন। এ জন্য তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, গোয়েন্দা সংস্থা তথ্য নিয়ে দেখুক ওই মহিলার কর্মকাণ্ড কতোটা ভযংকর। তার কর্মকাণ্ডে প্রতিবেশীরাসহ গ্রামবাসীরা অতিষ্ঠ।
নিহত মমতাজ উদ্দিনের ছেলে আনিছুর রহমান বলেন, সকালের দিকে বাবাকে নিয়ে আমার ভাই শহরে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিল। পথে অটো থেকে নামা মাত্রই দুইটা মোটরসাইকেলে চারজন হেলমেট পরা ব্যক্তি বলেন, 'এই ধর,এরাই এরাই' বলে মারপিট শুরু করেন। আব্বার মাথা ও পায়ে ছুরি দিয়ে আঘাতের চিহ্ন আছে। যে ভাই সাথে গিয়েছিলেন তিনি অসুস্থ, কথা বলতে পারছেন না। এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। আমরা সঠিক বিচার চাই।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, লাশ থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনা যেহেতু রংপুর কোতোয়ালি থানার আওতাধীন তারাই বিষয়টি দেখছেন। আমরা তাদের ম্যাসেজ দিয়ে সহযোগিতা করছি।