২৯ অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ - ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৫ - 13 December, 2025

তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতির হত্যাকাণ্ড ঘাতক টাইলস মিস্ত্রি গ্রেফতার:আলমত উদ্ধার

13 hours ago
96


তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধি: 

বহুল আলোচিত রংপুরের তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতিকে হত্যার ঘটনায় মোরসালিন (২৩) নামের এক যুবককে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) গভীর রাতে উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত বালাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন একাই হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। মোরসালিন উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত বালাপাড়া গ্রামের রুহুল আমিন ছোট্ট ছেলে। সে স্থানীয় সরকারি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। পুলিশ জানায়, গ্রেফতার মোরছেলিন হত্যার কয়েকদিন আগে দম্পতির বাড়িতে টাইলস লাগানোর কাজ করেছিলেন। মোরসালিন সম্প্রতি সময়ে আর্থিক ধার-দেনায় ভুগছিলেন। টাকার প্রয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা যোগেশ রায় ও তার স্ত্রী সুর্বণা রায় পুস্পকে নিজের বাড়ি থেকে সাথে করে নিয়ে আসা কুড়াঁল দিয়ে প্রথমে সুর্বণা রায় পুস্পকে রান্না ঘরে ও যোগেশ রায়কে খাবারের ঘরে কুপিয়ে হত্যা করেন। গ্রেফতার মোরসালিনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে পুলিশ তাকে নিয়ে দম্পতির বাড়ি ও আশপাশের এলাকায় অভিযান চালায়। প্রথমে বাড়ির পেছন দিক থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহত কুঁড়ালের হাতল উদ্ধার করা হয়। পরে কুঁড়ালের খোঁজে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি অন্যত্রে সরিয়ে পুকুরে নিযুক্ত ডুবুরি দল তল্লাশি চালিয়ে অন্যান্য আলামত উদ্ধারের অভিযান অব্যাহত রাখা হয়। রহিমাপুর চাকলা গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ভদ্র ও শান্ত স্বভাবের ছিলেন স্বামী ও স্ত্রী। গ্রামের অপদ-বিপদের একমাত্র ভরশা ছিলেন ওই পরিবারটি। তাদের দুজনকে নির্মমভাবে হত্যা করা হবে কেউয়েই মেনে নিতে পারেনি। হত্যাকাণ্ডের পর ওই গ্রামের বাসিন্দাদের চোখে মুখে যেমন ছিলো শোকের ছায়া তার পাশাপাশি অনেকেই ছিলেন আতংকেও। হত্যাকাণ্ডের আসামী গ্রেফতার হওয়ায় তাদের সেই ভয় এখন আর নেই। তারা ঘাতক আসামীর দ্রুত বিচার দাবি করেন। যোগেশ রায়ের কাকাত ভাই মৃলাল কান্তি রায় জানান, যোগেশ রায়ের বাড়িতে টাইলসের কাজ করার সময় একদিও ওই বাড়ি থেকে ৫ হাজার টাকা চুরি হয়ে যায়। কিন্তু কে চুরি করেছিলো তারা বিষয়টি নিয়ে শোরগোল করেনি। তার দুদিন পর বিকালে যোগেশ রায় বাড়িতে ছিলেন না তার স্ত্রী সুর্বণা রায় পুস্প বাড়িতে একাই ছিলেন। সেসময় তাদের ঘরের ভিতরে টাইলসের কাজ শেষ হলেও মোরসালিন তাদের ঘরে ঢুকে পড়ে বিষয়টি যোগেশের স্ত্রী সুর্বণা টের পেয়ে ঘরে গিয়ে দেখতে পান টাইলস মিস্ত্রি মোরসালিন খাটের নিচে লুকিয়ে রয়েছে। পরে তিনি বাড়িতে একাই থাকায় তাদের ঘর থেকে বেড়িয়ে এসে পাশের ঘর থেকে লুকিয়ে দেখেন মোরসালিন ঘর থেকে চুপিসারে বেড়িয়ে বাড়ির বাহিরে চলে যান। এ ঘটনাটি পরে সুর্বণা তার স্বামীকে অবগত করেন এবং যোগেশ রায় পরবর্তীতে বেশ কয়েকজনকে ঘটনাটি খুলে বলেন। এদিকে মোরসালিনের বাড়িতে গেলে তার বাবা রুহুল আমিন বলেন, মোর ছাওয়া খুবেই ভাল গ্রামোত কারো সাথে কোন দিন কোন ঝগড়া করেনি। মোর ব্যাটা খুন কিরবার পায় মোর ক্যানে গ্রামের কায়য়ো সে কথা কবার পাইবে না। মোরসালিনের মা মেরিনা বেগম বলেন, মোর ছাওয়া কাকো মারিবার পারে না। ওই মাষ্টারের বাড়িত কাজ করি আসি থাকি অয় অর বাপের সাথে ধান কাটার কাজ করেছোল কাল আইতোত আসি মোর সোনা ছাওয়াটাক পুলিশ আসি ধরি নিয়া গেল। ওই বেলে দুই জনক খুন করিছে। আল্লা তুই দেখিশ মোর ছাওয়া নির্দোশ। এর আগে গত শনিবার তারাগঞ্জ উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর চাকলা গ্রামের নিজ বাড়িতে খুন হন মুক্তিযোদ্ধা. সাবেক রহিমাপুর মুক্তিযোদ্ধা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ সভাপতি যোহেশ রায় ও তার স্ত্রী সুর্বণা রায় পুস্প। পরের দিন রোববার সকাল ৭টার দিকে তাদের বাড়ির কাজের লোক বাড়ির প্রথম গেটে ডাকাডাকি করলেও বাড়ির ভির থেকে কোন সাড়া না পেয়ে মই দিয়ে গেট দিয়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে ওই দম্পতির রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। পরে পুলিশকে খবরদিলে পুলিশ দম্পতির মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই দিন রাতে দম্পতির ছেলে সুভেন রায় অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তিদের আসামী করে তারাগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রেস ব্রিফিয়ে  পুলিশ সুপার জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোরসালিন হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় ব্যবহত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। একটি দা  পাওয়া গেছে এবং কুড়াল উদ্ধারের অভিযান চলছে।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth