নাশকতাকারী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না -স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি:
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছি, হতবাক হয়েছি। আমরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছিলাম যে, বাঙালি এই কাজ (ধ্বংসযজ্ঞ) কীভাবে করতে পারে! পরবর্তীতে মনে হয়েছে যে, এই বাঙালিইতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এই বাঙালিরাই আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এই ঘটনাটাই আমাদের সবকিছু মনে করিয়ে দেয়। তবে নাশকতাকারী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নাশকতাকারীরা চিহ্নিত হবে না, ততক্ষণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, এই আন্দোলনের পেছনে নিশ্চয়ই একটা কারণ ও শক্তি আছে। তারা আমাদের গর্বের মেট্রোরেলেও আগুন দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসের টোল ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হলো। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ হলো। ভিসিকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হলো। কেন তাকে জানে মেরে ফেলবেন, তার দোষটা কী? নরসিংদীতে জেলা কারাগার হাজার হাজার জনতা এসে ভেঙে ফেললো। সেখান থেকে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। রংপুরে তাজহাট থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ডিবির কার্যালয়ে আক্রমণ করা হলো। ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানা, উত্তরা থানা, মোহাম্মদপুর থানায় আক্রমণ করেছে। এভাবে একের পর এক থানায় হামলা হয়েছে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমার কাছে কষ্ট লাগে রংপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যখন দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর করল, আগুন দিল, তখন তো আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আপনারা কীভাবে ভুলে গেলেন আমরা বীরের জাতি, দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল না শুধু জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে স্বাধীন করেছি। আমরা পকেটে হাত দিয়ে যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী চিন্তাভাবনাসম্পন্ন একজন মানুষ। রংপুরে যে নাশকতা হয়েছে, এর পেছনে কারা জড়িত এবং কারা অর্থের জোগানদাতা সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ নেবেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বের উদ্দেশে আসাদুজ্জামান খান বলেন, আমাদের প্রধান বিচারপতি তার বেঞ্চে শতকরা ৭ ভাগ রেখে বাকি সব কোটা বাতিল করে দিয়েছেন। যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা রাখা হয়েছে সেটার সুবিধাও মেধাবীরা পাবে। কারণ আমরা যারা মুক্তিযোদ্ধা তাদের সন্তানদের বেশির ভাগের বয়স অনেক আগেই ৩০ বছর পার হয়েছে। কাজেই আমাদের জন্য আর কোটা নেই। এখন জিরো, সেই ক্ষেত্রেও আমরা (মুক্তিযোদ্ধারা) কিছু বলিনি। এখন ৯৮ শতাংশ মেধায় আসবে। এরপরও ছাত্রনেতারা বলছে না তারা আন্দোলন বন্ধ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরতে চায়। তারা যে আরও দাবি করেছিল সেগুলোর বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেবেন।
তিনি বলেন, আমি সব সময় বলে আসছি ছাত্রনেতারা ভুল করছে। এখনো বলছি তারা ভুলের মধ্যে আছে। এই যে ক্ষতিগুলো হলো, সম্পদ নষ্ট হলো, মানুষের জান গেল, এর দায়িত্ব কে নেবে? নিজের কাছে প্রশ্ন করুন, তারপর সিদ্ধান্ত নিন। আমি আশ্বস্ত করতে চাই, যারা যারা এই সম্পদ বিনষ্ট করেছে, থানা লুট করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করেছে, ভিসিকে হত্যার চেষ্টা করেছে, তাদের সবাইকে আমরা চিহ্নিত করব। যে অর্থ যোগান করেছেন, সহযোগিতা করেছেন তাকে আমরা চিহ্নিত করব। তাদের বিচারের ব্যবস্থা করব।
রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে সভার শুরুতে সহিংসতায় রংপুরে ক্ষয়ক্ষতি ও সার্বিক পরিস্থিতি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরেন জেলা প্রশাসক মোবাশ্বের হাসান। এতে রংপুরে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পৌনে ১১ কোটি টাকা দেখানো হয়। এছাড়া নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগে এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ১৮২ জন গ্রেফতার হয়েছেন বলে জানানো হয়।
এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রংপুর নগরীর তাজহাট থানা, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন।
এসময় পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও রংপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য টিপু মুনশি, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য নাসিমা জামান ববি, রংপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান বাবলু, রংপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাকির হোসেনসহ পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভাগীয় ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।