১ মাঘ, ১৪৩১ - ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ - 14 January, 2025

১ কোটি টাকা ব্যায়েও নেই স্মার্ট কার্ডের ২৮ সুবিধা

আমাদের প্রতিদিন
1 month ago
217


রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাবি সংবাদদাতা:

২০১৭ সালে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও আধুনিক সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হয় স্মার্ট আইডি কার্ড। প্রতিটি কার্ডের জন্য শিক্ষার্থীদের গুনতে হয় ৪০০ টাকা ফি। তবে প্রতিশ্রুত সুবিধাগুলো বাস্তবায়ন না হওয়ায় কার্ডটি শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায় অপ্রয়োজনীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেবার অভাবে অতিরিক্ত এই ফি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা এবং কার্ডের মূল্য কমানোর দাবি তুলেছেন।

তাছাড়া, একই বছরে স্মার্ট আইডি কার্ড চালুর সঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও দাপ্তরিক কাজ সহজ করতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি এক্সেস কন্ট্রোল গেট স্থাপন করা হয়। তবে মাত্র দুই মাস চালু থাকার পরই গেটগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে। আধুনিক এই গেটগুলো অর্ধযুগ ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকলেও রক্ষণাবেক্ষণে কোনো উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিল শাখার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মিজানউদ্দিনের সময়কালে ৮৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কেনা হয়েছিল আধুনিকমানের ছয়টি প্রবেশাধিকার গেইট। যার বর্তমান মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকার উপরে। শুধুমাত্র স্মার্ট কার্ডধারীরাই এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম মেশিনে কার্ড পাঞ্চ করে এসব গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে প্রবেশ করতে পারবে বলে জানানো হয়েছিল। ফলে ভর্তির সঙ্গে স্মার্ট আইডি কার্ড বাবদ অতিরিক্ত চারশো টাকা ফি প্রদান করে আসছে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু স্মার্ট আইডি কার্ডের প্রকৃত সুবিধা পাচ্ছে না তারা। উন্নত প্রবেশাধিকার গেটগুলো বসানোর মাস-দুয়েক না যেতেই অকেজো হয়ে পড়ে। ব্যয়বহুল দামে ক্রয় করা এসব মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার অর্ধযুগ পার হলেও সেদিকে নজর নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এদিকে শিক্ষার্থীরা জানান, স্মার্ট আইডি কার্ডের মাধ্যমে ২৮টি সেক্টরে আধুনিক সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হলেও, কোনো ক্ষেত্রেই কাজে লাগছে না। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ও ফর্ম-ফিলাপের সময় ছাড়া আর কোনো কাজেই লাগে না এই স্মার্ট কার্ড। অনেকে দাবি করছেন, এই স্মার্ট কার্ড ঢাকার নীলক্ষেত থেকে ৫০ টাকায় তৈরি করা যায়। তাহলে বিনা সেবায় আমরা কেন ৪০০ টাকা ফি দেব?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়কে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনতে দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০১৭ সালে স্মার্ট আইডি কার্ড চালু করেন তৎকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ মিজানউদ্দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, ইন্টারনেট সার্ভিস, পেমেন্ট সিস্টেম, মেডিকেল কার্ড ও লাইব্রেরি কার্ড, বাস কার্ডসহ ২৮টি সেক্টরে এ কার্ডের ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তির সময় স্মার্ট কার্ড বাবদ অতিরিক্ত ৪০০ টাকা ফি নেওয়া হয়।

কার্ডে শিক্ষার্থীদের নাম, নিবন্ধন নম্বর, আইডি কোড, ছবি, বিভাগ, হল কোড, বর্ষ ব্যক্তিগত সব তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এ কার্ড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার নম্বরপত্র ও সনদপত্র তোলা, গ্রন্থাগার, বিভাগ, ইনস্টিটিউট, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস, হল অফিস এবং নিরাপত্তাবিষয়ক বিভিন্ন কাজ করার সুযোগ পাবেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে জানানো হয়।

এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহমিদুর রহমান বলেন, 'স্মার্ট আইডি কার্ডের মাধ্যমে ২৮টি সেক্টরে সুবিধার কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু বাস্তবে এটি কোনো ক্ষেত্রেই কাজে আসে না। শুধু চিকিৎসা কেন্দ্র ও ফর্ম ফিলাপ ছাড়া আর কোনো কাজেই লাগে না এই কার্ড। আর নীলক্ষেতে এই ধরনের স্মার্ট কার্ড ৫০ টাকায় পাওয়া যায় অথচ আমরা দিচ্ছি ৪০০ টাকা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাসানাত কারীম জানান, 'আমরা অতিরিক্ত টাকা দিয়েও প্রতিশ্রুত সুবিধাগুলো পাচ্ছি না। ৮৫ লাখ টাকায় কেনা গেটগুলো অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। এতো টাকা খরচ করে এই প্রকল্পের কোনো সুফল আমরা পাইনি। এটা শুধু টাকার অপচয়। ডিজিটালাইজেশনের নামে শুধু ফি নেওয়া হচ্ছে, কিন্তু কোনো কার্যকর সেবা দেওয়া হচ্ছে না।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন সূত্রে জানা যায়, স্মার্ট কার্ড বাবদ ২০১৬-১৭ সেশনের ৪ হাজার ১৪৫ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে প্রায় ১৬ লাখ ৫৮ হাজার টাকা আদায় করা হয়। ২০১৭-১৮ সেশনের ৪১ হাজার ১৯ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ১৬ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ টাকা, ২০১৮-১৯ সেশনের ৪ হাজার ১৭৩ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ২০০ টাকা, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৪ হাজার ১৫১ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ১৬ লাখ ৬০ হাজার ৪০০ টাকা।

২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ৪ হাজার ১৭৩ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় লাখ ১৬ হাজার ৬৯ হাজার ২০০ টাকা ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ৪ হাজার ২০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রায় ১৬ লাখ ৮ হাজার টাকা। ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ৪ হাজার ৭৮৩ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৭ লক্ষ ৫৪ হাজার এবং সর্বশেষ ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ৪ হাজার ৩৩২ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ১৭ লক্ষ ৩২ হাজার ৮শত টাকা আদায় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গত ৭ বছরের কার্ড ক্রয় বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি ১ লক্ষ ৩০ হাজার ৪০০ টাকা আদায় করা হয়েছে।

স্মার্ট কার্ডের দায়িত্বে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক খাদেমুল ইসলাম মোল্ল্যা বলেন, আমাদের একটা কার্ড কিনতে ২২০ থেকে ২৩০ টাকা লাগে। তাও আমরা কার্ড পাচ্ছি না। এখন কেউ যদি ৫০ টাকায় কার্ড দিতে পারে তাহলে আমরা যোগাযোগ করে  তাদের থেকে কার্ড এনে দাম কমাতে পারব।

তিনি আরো বলেন, আমরা যে কার্ড ইউজ করি সেটা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবহার করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কার্ডের দাম ৫০০ টাকা নেয়। সেখানে আমরা তো কম নেই। আর কেউ যদি আমাদের থেকে কম টাকায় দিতে পারে তাহলে আমরাও দাম কমিয়ে দেব।

সর্বশেষ

জনপ্রিয়

// Set maxWidth